আজকের শীর্ষ সংবাদ

রমজানের জরুরী মাসআলা

যে সমস্ত কারণে রোজা ভেঙ্গে যায় না রোজার ফজিলত ও গুরুত্ব রোজা ভঙ্গের কারণ
Spread the love

আহলান সাহালান মাহে রমজান! قال الله تعالى يا ايها الذين امنوا كتب عليكم الصيام كما كتب على الذين من قبلكم لعلكم تتقون (البقرة এর অর্থ, আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে ঈমানদারগণ তোমাদের উপর রমজানের রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যাতে করে তোমরা মুত্তাকী হতে পারো। (আল কোরআন, সুরাতুল বাকারা)

 হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছেন, হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এরশাদ করেন, বনি আদমের সকল আমলের প্রতিদান দশগুণ হতে সত্তর গুন বৃদ্ধি করা হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, রোজা আমার জন্য এবং আমি তার প্রতিদান দিব। (মিশকাত-১৮৩)

রোজার নিয়ত বাংলা

রোজার ক্ষেত্রে রোজার নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা জরুরী নয়। অন্তরের নিয়ত জরুরী এবং ফরজ। তবে অন্তরের নিয়তের পাশাপাশি মুখে উচ্চারণ করাটা মুস্তাহাব আদায় হবে এই মুস্তাহাব আদায়ের জন্য শুধু এতোটুকুই বলা যথেষ্ট হবে যে, রোজার আরবি নিয়ত نويت بصوم غد من شهر رمضان المبارك  (আমি আগামীকাল রমজান মাসের  রোজা রাখার নিয়ত করলাম। অথবা দিনের ১১ টার পূর্বে বলতে হবে আমি আজকে রোজা রাখিলাম।

রোজা ভঙ্গের কারণ

যে সমস্ত কারণে রোজা ভেঙ্গে যায় এবং শুধুমাত্র কাজা ওয়াজিব হয়।

  1. রোজাদারের মুখে কেউ জোরপূর্বক কিছু ঢেলে দিলে এবং তা যদি কন্টেনালিতে চলে যায়  তাহলে রোজা নষ্ট হয়ে যাবে এবং সেই রোজা কাজা আদায় করতে হবে। (সূত্র মাসায়েলের রমজান ১০৩)
  2. রোজার কথা স্মরণ থাকা অবস্থায় গোসল বা কুলি করার সময় ভুলবশত  কণ্ঠন নালীর ভিতরে পানি চলে গেলে রোজা নষ্ট হয়ে যাবে।
  3. ইচ্ছাকৃতভাবে খাদ্যদ্রব্য ছাড়াও কংকর,  পাথরের টুকরা ফলের  আঁটি বা কাগজের টুকরা গিলে ফেললে রোজা নষ্ট হয়ে  যাবে।
  4. দাঁতের মধ্যে আটকে থাকা বস্তু জিব্বা দিয়ে বের করে গিলে ফেলা হয়েছে যদি তা বুটের বরাবর অথবা তার থেকে বড় হয় তবে রোজা নষ্ট হয়ে যাবে।
  5. কোন লোক নিজের মুখ থেকে তুতু বের করে হাতে নিয়ে পুনরায় গিলে ফেললে অথবা অন্য লোকের তুতু গিলে ফেললে রোজা নষ্ট হয়ে যাবে।
  6. দাঁত থেকে নির্গত রক্ত যদি থুতু থেকে বেশি বা তুতুর সমান হয় এবং সেটা যদি গিলে ফেলা হয় তাহলে রোজা নষ্ট হয়ে যাবে।
  7. বমি আসার পর ইস্তাকৃতভাবে গিলে ফেললে বা ইচ্ছাকৃতভাবে মুখ ভরিয়া বমি করলে রোজা নষ্ট হয়ে যাবে।
  8. ইচ্ছাকৃতভাবে রোজার কথা স্মরণ থাকা অবস্থায় ভেজা আঙ্গুল পিছনে বা সামনের রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করালে রোজা নষ্ট হয়ে যাবে।
  9. স্ত্রীকে চুম্বন কিংবা আলিঙ্গন করার কারণে অথবা স্ত্রীর সাথে পরস্পর হাত মিলানোর কারণে যদি বীর্যপাত ঘটে গেলে তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে।
  10. ভুলবশত কোন কিছু খেয়ে ফেললে রোজা নষ্ট হয়ে গেছে ভেবে পুনরায় ইচ্ছাকৃতভাবে খেলে কিম্বা পান করলে রোজা নষ্ট হয়ে যাবে।
  11. রমজান ছাড়া অন্যান্য দিনে যদি কেউ রোজা রেখে ইচ্ছাকৃতভাবে ভেঙ্গে ফেলে সেই রোজা আদায় করার ওয়াজিব হবে। (সূত্র ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া প্রথম খন্ড ১০৩ এবং ১০৪ পৃষ্ঠা)

রোজা কত তারিখে ২০২৪

আলহামদুলিল্লাহ ইতোমধ্যে সৌদি আরবে একটা রোজা রেখে ফেলেছেন। ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশে সোমবার দিবাগত রাত থেকে রোজা শুরু হবে। 

রোজা ভঙ্গের কারণ

যে কারণে রোজা ভেঙ্গে যায় এবং তার কাযা ও কাফফারা উভয়টি একসাথে ওয়াজিব হয়।

  1. রমজান মাসের রোজা রেখে যে সমস্ত বস্তু খাদ্য বা ঔষধ হিসেবে স্বাদ গ্রহণের জন্য ব্যবহার করা হয় তা ইচ্ছাকৃতভাবে খেলে বা পান করলে রোজা ভেঙ্গে যায়।
  2. ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা রাখা অবস্থায় বিডি সিগারেট কিংবা হুক্কা পান করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে এবং কাজা ও কাফফারা উভয়টি একসাথে আদায় করতে হবে। (ফতোয়ায়ে শামী ২য়  খন্ড ১৩৪ পৃষ্ঠা)
  3. রমজানের ফরজ রোজা ভাঙ্গার কারণে কাফফারা ওয়াজিব হয়। আর রমজানের রোজা ছাড়া অন্য কোন রোজা ভাঙ্গার কারণে ওয়াজিব হবে না। (সূত্র ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া প্রথম খন্ড ২২০ পৃষ্ঠা)

যে সমস্ত কারণে রোজা ভেঙ্গে যায় না

  1. রোজার কথা মনে না থাকলে এবং ভুলবশত কিছু খেয়ে ফেললে অথবা স্ত্রী সহবাসও করে ফেললে রোজা ভেঙ্গে যাবেনা। 
  2. ভুলবশত কণ্ঠনালিতে ধুলা-বালি প্রবেশ করার কারনে রোজা নষ্ট হয় না।
  3. রোজা অবস্থায় সুরমা ব্যবহার করলে, আতর বেবহার করলে, কিংবা মাথায় তেল দিলে, অথবা ঘ্রাণ নিলে রোজা নষ্ট হবে না। 
  4. জোরে জোরে নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় নাকের ভেতরে কোন ময়লা ভেতরে চলে গেলে রোজা নষ্ট হয় না। 
  5. মিসওয়াক করার সময় দাঁত থেকে রক্ত হলে এবং সেতে যদি কণ্ঠনালির ভিতরে প্রবেশ না করে তাহলে রোজা নষ্ট হবে না।
  6. যদি কারো গোসল ফরজ হয়ে যায় আর সুবহে সাদিকের পূর্বে গোসল না করে তাহলেও রোজার কোন ক্ষতি হবে না।
  7. যদি কেউ নিজের স্ত্রীকে চুমু দেয় এবং জড়িয়ে ধরে সে ক্ষেত্রে বীর্যপাত না হলে । তবে রোজা অবস্থায় এই ধরনের কাছ থেকে বিরত থাকা উচিত।
  8. সূর্য ডুবে গেছে মনে করে ইফতার করার পর প্রমাণিত হলো যে আসলে সূর্য ডুবেনি,  এই অবস্থায়ও তার রোজা ভেঙ্গে যাবে তাই তার কাজা আদায় করতে হবে ।
  9. ঠান্ডা  কিংবা গরম পানিতে গোসল করার পর যদি অন্তরে ঠান্ডা অথবা গরম অনুভব হয় তার দ্বারা রোজা নষ্ট হবে না।
  10. ইনজেকশন দেওয়ার কারণে রোজা নষ্ট হয় না, তবে স্যালাইন দিলে রোজা নষ্ট হয়ে যায়। (আলাতে জাদিদা, ৮৪)
  11. স্বপ্নদোষ হলে কি রোজা ভেঙ্গে যায়? না (ফতোয়ায়ে আলমগিরি ১ম খণ্ড)

রোজা রাখার হুকুম

প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর উপর রমজানের রোজা রাখা ফরজ। কোন কারণ ব্যতীত রোজা না রাখা কারো জন্য জায়েজ নেই।

 ১০ জন ব্যক্তির জন্য রোজা রাখা ফরজ নয়

  1. অমুসলিম।
  2. অপ্রাপ্তবয়স্ক।
  3. পাগল।
  4. এমন বৃদ্ধ লোক যে ভালোমন্দের পার্থক্য বুঝেনা।
  5. এমন বৃদ্ধ লোক যার কোন রোগ কোন মুক্তির সম্ভাবনা নেই। তবে তার উপর ফিদিয়া আদায় করা ফরজ।
  6. মুসাফির।
  7. রোগাক্রান্ত ব্যক্তি।
  8. ঋতুবর্তী মহিলা।
  9. দুগ্ধদানকারী মহিলা, যদি কোন ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।
  10. দুর্ঘটনায় পতিত, অথবা বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিকে রক্ষাকারী ব্যক্তি। এই ১০ জন লোকের জন্য রমজানের রোজা রাখা ফরজ নয়। 

রোজার মাকরুহ সমূহ

যে সমস্ত কারণে রোজা মাকরুহ হয়ে যায়, সেগুলো হলো-

  • পরনিন্দা করলে কিংবা কাউকে গালাগালি করলে।
  • দেরি করে ইফতার করলে।
  • স্বাদ আছে এমন কোন বস্তু দ্বারা মজন করলে।
  •  গরমের কারণে ভেজা কাপড় শরীরে  জড়িয়ে রাখলে।
  •  কোন কিছুর স্বাদ গ্রহণ করলে।
  •  ছোট শিশুদেরকে অথবা সন্তানদেরকে কিছু চিবিয়ে দিলে।

সেহরি খাওয়ার সময়

সুবহে সাদিক হওয়ার আগ পর্যন্ত সেহরি যত দেরিতে খাওয়া যায় তত ভালো। তবে মনে রাখতে হবে সুবহে সাদিক হওয়ার পর যেন না হয়।

শেষ কথা

এবারের রমজান যেন সবার মাঝে শান্তি সুখ বয়ে আনুক। আমরা যেন এই মাসে আল্লাহ তাআলার বেশি বেশি ইবাদত করতে পারি এবং নিজের গুনাহ মাফ করতে পারি। আমিন।

One thought on “রমজানের জরুরী মাসআলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *