মেথি
মেথি হলো একটি মৌসুমী গাছ। এই গাছের পাতা শাক হিসেবে খাওয়া হয়। গ্রামে গঞ্জে এই শাক খুবই জনপ্রিয়। গ্রামের মানুষ এই গাছের শাক খুব তৃপ্তি সহকারে খাই। এটি আবার এটি মশালা হিসেবে খুবই জনপ্রিয়। এটি আবার পাঁচ পোডনের মধ্যে থাকা মসলার একটি। কবিরাজি, ইউনানী চিকিৎসকরা বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার জন্য এই গাছের পাতা কিংবা ফল ব্যবহার করে থাকেন।এই মেথি থেকে স্টেরয়েডের উপাদান তৈরি করা হয়।
মেথি দেখতে কেমন
মেথি গাছের মধ্যে তিনটি পাতা একসাথে জন্ম নেয়। এই গাছে ফুল হয় আবার ফল ও হয়। মেথি গাছের মধ্যে স্ত্রী ফুল এবং পুরুষ ফুল দুটোই ফোটে। এই গাছের ফুল এবং ফল দুটোই হালকা বাদামি হলুদ রঙ্গের হয়ে থাকে।মেথি সাধারণত চার কোনা বিশিষ্ট হলুদ রঙ্গের হয়ে থাকে।
মেথির উপকারিতা ও অপকারিতা
মেথির উপকারিতা
মেথির অপর নাম পাওয়ার হাউসও বলা হয়ে থাকে। মেথির মধ্যে রয়েছে অনেকগুলো উপাদান যেমনঃ ফাইবার, ফসফোলিপিডস, গ্লাইকোলিপিডস, লিনোলিক অ্যাসিড, কোলিন, ভিটামিন এ, বি১, বি২, সি, নিকোটিনিক অ্যাসিড, নিয়াসিন ইত্যাদি। মেথির বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে। যেমনঃ
- যাদের অনিয়ন্ত্রিতভাবে ওজন বেড়ে যায় মেথি খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো একটা মাধ্যম হল এই মেথি।
- যাদের দীর্ঘ সময় ধরে হজমের সমস্যা তাদের হজমের সমস্যা ভালো হতে সাহায্য করবে।
- এটি দুগ্ন দান মায়ের দুধ উৎপাদনে এবং নবজাতক শিশুদের ওজন বৃদ্ধির হার বাড়াতে পারে।
- এটি পুরুষের যৌন চাহিদা বাড়াতে সাহায্য করেন।
- মেথি ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নতি, চুলের যত্ন, ওজন নিয়ন্ত্রণ, ইত্যাদি করতে বেশ উপযোগী।
- নিয়মিত মেথি চা পান করলে কিডনি পরিষ্কার থাকে। এবং কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকিও কমে যায়।
- মেথি শরীরের বিপাকিয় হাডের হ্রাস বাড়াতে বেশ কার্যকর।
- রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়।
- বুকের জ্বালাপোড়া দূর করে, যারা বুক জ্বালা পুড়ায় ভুগছেন তারা নিয়মিত এই মেথি খেতে পারেন।
- গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার জন্য এই মেথি অনেক উপকারী।
মেথির অপকারিতা
মেথির অনেকগুলো উপকারীতার পাশাপাশি বেশ কয়েকটা অপকারিতাও রয়েছে।
- মেথির স্বাদ যেহেতু তিতা তাই এটি খাওয়ার ফলে অনেকের বমি বমি ভাব হতে পারে এবং মাথা ঘোরার সমস্যাও হতে পারে।
- গর্ভবতী মহিলারা দীর্ঘদিন ধরে মেথি খেলে অসময়ে বাচ্চা প্রসব হয়ে যেতে পারে।
- মেথি রক্তের ঘনত্ব প্রতিরোধ করে, যাদের রক্ত পাতলা তারা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মেথি খেতে পারেন নিয়ম অনুযায়ী।
- শরীরের রক্তের পটাশিয়ামের মাত্রা কমিয়ে দেয়।
- লিভারের সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
- মেথি ওজন কমায়, যারা ওজন বাড়াতে চান তারা ভিন্ন কিছু অবলম্বন করতে পারেন।
পুরুষের জন্য মেথির উপকারিতা
মেথিতে রয়েছে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা, যা পুরুষের যৌন স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে সাহায্য করে। তা তাছাড়া যাদের দীর্ঘদিন ধরে হজম সমস্যা রয়েছে তারা এই মেথি খেতে পারেন।এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, দৈনিক ৩০০ মিলিগ্রাম করে আট সপ্তাহ পর্যন্ত মেথি খেলে এবং তার পাশাপাশি শক্তিবর্ধক ব্যায়াম করলে সেক্স হরমোন এর মাত্রা তুলনামূলক বেড়ে যায়। আর যৌন আকাঙ্ক্ষা অনেকটাই বেড়ে যায় বলে জানা যায়।
গ্যাস্ট্রিকের জন্য মেথি খাওয়ার নিয়ম
অস্বাভাবিক এবং অনিয়মিত খাদ্য গ্রহণের কারণে আমাদের শরীরে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেয়। এই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করার জন্য অনেকেই প্রতিনিয়ত ওষুধ খেয়ে যাচ্ছেন কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না। এই মেথি কিছু নিয়মকানুন মেনে খেতে পারলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হয়ে যাবে। কেননা এই মেথি শরীরের জন্য এবং গ্যাস্ট্রিকের জন্য বিশেষ কার্যকর। নিম্ন বর্ণিত নিয়ম গুলো মেনে মেথি খেতে পারলে আশা করি আপনার গ্যাস্টিকের সমস্যা দূর হয়ে যাবে। নিয়মগুলো হলঃ
- এক গ্লাস পরিমাণ পানি নিয়ে এক চামচ মেথি ভিজিয়ে রাখুন।
- ১০ মিনিট পরিমাণ ভেজানোর পর তা খেয়ে ফেলুন। চাইলে আপনি স্বাদ বাড়ানোর জন্য সাথে মধু এবং লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন।
- এক গ্লাস গরম পানির মধ্যে এক চামচ পরিমাণ মেথি ভিজিয়ে রাখুন ১০ মিনিট পর ওই মেথি ভেজানো পানি পান করলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
- একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, দৈনিক দুইবার করে মেথি খেতে পারলে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে। আস্ত খেতে না চাইলে ভাতের সঙ্গে গুডু করেও খেতে পারেন।
মেথির উপকারিতা চুলের জন্য
চুল পড়া সমস্যা দূর করতে
আসলে আমাদের মাথা থেকে চুল পড়া একটি অস্বাভাবিক বিষয়। তবে এটি যদি দৈনিক ৫০ থেকে ১০০ পর্যন্ত হয় এটি স্বাভাবিক। যদি এর চেয়ে বেশি হয় তাহলে আমাদের জন্য বড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, এই চিন্তা দূর করতে মিটিং হতে পারে একমাত্র অবলম্বন।
একটি পাত্রের মধ্যে ৫০ গ্রাম মেথি ১০০ থেকে ২০০ গ্রাম পানিতে পুরো রাত ভিজিয়ে রেখে সকালে সেই পানিটুকু ছাকিয়ে নিন। এখান থেকে এক গ্লাস পানি পান করুন অতঃপর বাকি পানিগুলো আপনার মাথায় এক্সপ্রে করুন এবং সাত থেকে দশ মিনিট আপনার মাথা মেসেজ করুন। এরপর এক ঘন্টা রাখার পর মাথা ধুয়ে ফেলুন।
মেথিতে রয়েছে প্রোটিন ও নিকোটিনিক এসিড যা চুলকে ভিতর থেকে মজবুত করতে সহায়তা করে।
চুলের খুশকি দূর করে
চুলে খুশকি আমাদের সুন্দর চুলকে অসুন্দর করে তোলে। চলে যখন খুশকি হয় তখন খুব বিরক্ত লাগে এটি সাধারণত বয়সন্ধিকাল এর আগে তেমন একটা দেখা যায় না বয়সন্ধিকাল এর পরে বেশি দেখা যায়। চুলের খুশকি দূর করতে মেতি এইভাবে ব্যবহার করুন যে,
এক থেকে দুই চা চামচ মেথি এক গ্লাস পানিতে ১০ থেকে ১২ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন এরপর মেথিসহ কিছুটা পানি ব্লেন্ডার করে নিন এবং এতে দুই থেকে তিন চা চামচ পরিমাণ দই যোগ করে নিন এইবার মাথার ত্বকের মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট পর্যন্ত লাগিয়ে রাখুন এরপর ভালো ভাবে শ্যাম্পু করে ফেলুন।
খুব বেশি খুশকি সমস্যা হলে সপ্তাহে একবার, আর যদি একটু কম হয় তাহলে 15 দিনে একবার ব্যবহার করবেন।
এছাড়াও চুলের আরো অনেকগুলো উপকার করে যেমনঃ
- চুলের অকালপক্কতা রোধ করে।
- চুল বৃদ্ধি করে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায়তা করে।
- ময়েশ্চারাইজার ও কন্ডিশনার হিসেবে।