আজকের শীর্ষ সংবাদ

গরুর মাংস সমাচার রাবির হলে

গরুর মাংস সমাচার রাবির হলে
Spread the love

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ আমীর আলী হলে রমজান মাসে ডাইনিংয়ে গরুর মাংস না খাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন হল প্রশাসন ও হলের শিক্ষার্থীরা।
তবে এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিন্নভাবে উঠে আসায় আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
অবশেষে আলোচনার মাধ্যমে সেই সিদ্ধান্ত তুলে নিয়েছে হল প্রশাসন।
তবে যেদিন গরুর গোশত রান্না হবে সেদিন হাঁড়ি-পাতিল, থালাবাসন, চামচ, জগ-গ্লাসসহ সব তৈজসপত্র ভাড়া করে আনা হবে। আর সেই খরচ হল প্রশাসন বহন করবে।

শুক্রবার (৮ মার্চ) রাতে দু’শতাধিক শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে এমন সিদ্ধান্ত নেয় হল কর্তৃপক্ষ।

জানা যায়, আমীর আলী হলে একটি মাত্র ডাইনিং।
কোনো ক্যান্টিন নেই। এই ডাইনিংটি এখন হলের শিক্ষার্থীরা নিয়ন্ত্রণ করেন। নাম দেয়া হয়েছে ‘ইসাবেলে ক্যাটারিং’।

কিছুটা ছাত্রাবাসের মতো পরিচালিত এই ক্যান্টিনে কী খাওয়া হবে শিক্ষার্থীরা নিজেরা মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেন।
নিজেদের মধ্যে থেকে ম্যানেজার নির্ধারণ করে শিক্ষার্থীরা এটা পরিচালনা করেন।
তবে এটি তদারকি করে হল প্রশাসন।

রাবির হলে গরুর মাংস সমাচার

সৈয়দ আমীর আলী হলের ডাইনিং পরিচালিত হয় শিক্ষার্থীদের দ্বারা। ফাইল ছবি

রমজান মাস সামনে রেখে হল ডাইনিংয়ে গরুর মাংস চলবে কি চলবে না তা নির্ধারণে মুসলিম ও সনাতন ধর্মের ছাত্র প্রতিনিধিদের নিয়ে সভা করে হল প্রশাসন।
সেখানে শিক্ষার্থীদের সম্মতি নিয়ে রমজান মাসে গরুর মাংস ডাইনিংয়ের খাদ্য তালিকায় না রাখার সিদ্ধান্ত হয়।

কারণ এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হল ও এসএম হলে গরুর মাংস খাদ্য তালিকায় রাখা নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল। এ নিয়ে তখন আন্দোলনও হয়।
তাই হল প্রশাসন এই সিদ্ধান্ত নেয়। তবে এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি করে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার নতুন করে মিটিং ডেকে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়।

আগের মিটিংয়ে কী সিদ্ধান্ত হয়েছিল তা জানতে চাইলে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র স্বপন হোসাইন বলেন, ‘সারা বছর আমরা গরুর মাংস না খেলেও রমজান মাসে ৫/৭ দিনের জন্য সেহরিতে গরুর মাংস খাওয়ার জন্য প্রাধ্যক্ষ স্যারের কাছে আবেদন জানাই।

‘গত পরশু রাতে প্রাধ্যক্ষ স্যারের কক্ষে আমরা এবং ১০-১৫ জন হিন্দু ভাইয়ের উপস্থিতিতে প্রাধ্যক্ষ স্যার মিটিং করেন।
সেখানে আমরা গরুর মাংস খাদ্য তালিকায় রাখার আবেদন জানালে তারা গরুর মাংস খেতে নিষেধ করেন। পরে প্রাধ্যক্ষ স্যার সিদ্ধান্ত নেন সেহরিতে গরুর মাংস চলবে না।’

পরিসংখ্যান বিভাগের ১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের পলাশ মণ্ডল বলেন, ‘সেহরিতে গরুন মাংস চলবে জানার পর প্রাধ্যক্ষ মহোদয়কে আমাদের আপত্তির কথা জানাই। কারণ এর আগে শাহ্ মখদুম হল ও শহিদ হবিবুর রহমান হলে দুটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে এই গরু মাংস খাওয়া নিয়ে।

তখন প্রাধ্যক্ষ স্যার আমাদের ও কয়েকজন মুসলমান ভাইকে নিয়ে মিটিং করেন। ওই মিটিংয়ে আমরা আবারও আপত্তি জানালে প্রাধ্যক্ষ স্যার গরুর মাংস বন্ধ রাখতে সবাইকে অনুরোধ করেন।’

সংস্কৃত বিভাগের ১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের দিলবর হোসেন ইমন বলেন, ‘হলের কাটারিংয়ে রমজান মাসে সেহরিতে গরুর মাংস রান্নার ব্যাপারে ৭ তারিখে প্রভোস্ট স্যারের রুমে মিটিং হয়েছিল।

মিটিংয়ে সনাতন ধর্মের ছেলেরা গরুর মাংস রান্নার বিরোধিতা করে ও গরুর মাংস রান্না বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। এতে মুসলিম শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয় ও তারা প্রতিবাদ জানায়। পরে প্রভোস্ট স্যার পরের দিন আবার দুই ধর্মের ছেলেদের নিয়ে ডাইনিং রুমে একটা মিটিংয়ের আহ্বান করেন।


গরুর মাংস সমাচার রাবির হলে
গরুর মাংস সমাচার রাবির হলে

মিটিংয়ে সবার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হয়, যেদিন গরুর মাংস রান্না হবে সেদিন ডেকোরেশন থেকে প্লেট ও রান্নার সব সরঞ্জাম আনা হবে। ডাইনিংয়ের কোনো জিনিস রান্নার কাজে ব্যবহার করা হবে না। উভয় পক্ষই এতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে।’

সৈয়দ আমীর আলী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম মাহমুদুল হক বলেন, স্বল্প খরচে ছাত্রদের মতৈক্যের ভিত্তিতে সবাই যেন স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিসম্মত খাবার খেতে পারে এমন সব কমন আইটেমই এখানে রান্না করা হয়।
প্রতি মাসে কী খাওয়া হবে তা শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে মিটিং করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। হল প্রশাসন শুধু তদারকি করে।

‘গরুর মাংস নিয়ে প্রথমে মুসলিম শিক্ষার্থীরা বলে যে তারা রমজান মাসে গরুর মাংস খেতে চায়।
আমি শিক্ষার্থীদের ওপর ছেড়ে দেই। কারণ কী খাওয়া হবে শিক্ষার্থীরাই সব সিদ্ধান্ত নেয়।
এরপর সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা এতে আপত্তি জানায়। এরপর উভয় ধর্মের শিক্ষার্থীদের নিয়ে মিটিংয়ে সবাই গরুর মাংস না খাওয়ার পক্ষে সম্মতি দেয়। তার মানে এই নয় যে, গরুর মাংস না খাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল।’

তিনি বলেন, ‘গরুর মাংস বলি আর খাসির মাংস এগুলোর খরচ অনেক বেশি। সব শিক্ষার্থীর জন্য এটা কষ্টকর হয়ে যাবে। এখন তারা যদি কষ্ট করে ম্যানেজ করতে পারে তাহলে সব মাসেই তারা খাবে।
এতে কারও কোনো সমস্যা নেই।
রমজান মাসের জন্য যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এটা সাময়িক। শিক্ষার্থীরা নিয়মিত খেতে চাইলে হল প্রশাসন থেকে আলাদা পাতিলসহ প্রয়োজনীয় সব কিনে নেয়া হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো ধরনের বাধা নেই।’

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবর ছড়ানোর বিষয়ে অধ্যাপক মাহমুদুল হক বলেন, ‘আমি কোনো লিখিত নোটিশ দেইনি। যারা মিটিংয়ে উপস্থিত ছিল তাদের সঙ্গে মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

যারা মিটিংয়ে ছিল না তারাই মূলত বিষয়টিকে বড় করে সামনে নিয়ে এসেছে। কারণ সবার মানসিকতা সমান না। আর ওই মিটিংয়ে কোন প্রেক্ষিতে কথা বলা হয়েছিল তারা জানত না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *