আজকের শীর্ষ সংবাদ

ওমরাহ হজতুল্য মাহে রমজানে

ওমরাহ হজতুল্য মাহে রমজানে
Spread the love

নবীজি (সা.) বলেছেন, ভূলুণ্ঠিত হোক তার নাক, যে রমজান মাস পেল অথচ তার গুনাহ মাফ হয়ে যাওয়ার আগেই তা পার হয়ে গেল।
তাই মুমিনের উচিত, পবিত্র মাহে রমজানের প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করা।

ইবাদতে গুরুত্ব দেওয়া। অধিক হারে নামাজ ও তিলাওয়াতের পাশাপাশি বেশি বেশি আল্লাহর জিকির করা, ইস্তিগফার করা।
কারণ আল্লাহকে অধিক হাতের স্মরণ করলেও বান্দা গুনাহমুক্ত হয়।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, … আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও নারী, তাদের জন্য আল্লাহ মাগফিরাত ও মহাপ্রতিদান প্রস্তুত করে রেখেছেন। (সুরা : আহযাব, আয়াত : ৩৫)

জিকির এমন একটি ইবাদত, যা করতে কোনো কষ্ট নেই, কিন্তু এর মাধ্যমে দুনিয়া ও আখিরাতের অফুরন্ত কল্যাণ অর্জন করা যায়।

জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, যে লোক বলে ‘সুবহানাল্লাহিল আজিম ওয়াবিহামদিহী’ (আমি মহান আল্লাহ তাআলার প্রশংসা সহকারে পবিত্রতা ঘোষণা করছি) জান্নাতে তার জন্য একটি খেজুরগাছ লাগানো হয়। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৬৫)

পৃথিবীর প্রথম নির্মিত ঘর ও প্রথম মসজিদ হলো মক্কায় স্থাপিত কাবাঘর। সেটিই মুসলমানের কিবলা ও হজ-ওমরাহর মূল কেন্দ্র।

হজ ও ওমরায় রয়েছে ইবরাহিম (আ.) ও তাঁর পরিবারের অসংখ্য স্মৃতি। ইবরাহিম (আ.) স্ত্রী হাজেরা ও শিশু ইসমাঈলকে আল্লাহর হুকুমে মক্কায় রেখে যান।

ইসমাঈল (আ.) পিতার কাজে সহযোগিতা করার মতো বয়সে পদার্পণ করলে আল্লাহর পক্ষ থেকে ইবরাহিম (আ.)-এর প্রতি কাবাঘর পুনর্নির্মাণের নির্দেশ আসে।

তিনি পুত্র ইসমাঈল (আ.)-কে নিয়ে কাবাঘর পুনর্নির্মাণ করেন। ইবরাহিম (আ.)- এর কাবা নির্মাণকালীন পদচিহ্নবিশিষ্ট পাথর আজও সেখানে বিদ্যমান, যা মাকামে ইবরাহিম নামে পরিচিত।
হাজেরা দুগ্ধপোষ্য শিশুকে নিয়ে জনশূন্য এই প্রান্তরে অবস্থানকালে কঠিন পিপাসায় পানির খোঁজে সাফা-মারওয়া পাহাড়ে বারবার দৌড়ান।

সাতবার ছোটাছুটি করেও পানির সন্ধান না পেয়ে শিশুর কাছে ফিরে আসেন। তখনই জিবরাইল (আ.) শুষ্ক মরুভূমিতে পানির একটি ঝরনাধারা বইয়ে দেন। বর্তমানে এই ধারাই জমজম কূপ।

সামর্থ্যবানদের জন্য জীবনে একবার হজ করা ফরজ এবং জীবনে একবার ওমরাহ পালন করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা।

তুলনামূলকভাবে ওমরাহ একটি সহজ ইবাদত। তাই সুযোগ ও সামর্থ্য থাকলে ওমরাহ করা উচিত। রমজান মাস ওমরা পালনের সেরা সময়।

ওমরাহর গুরুত্ব ও ফজিলত

কুরআন ও হাদীসের আলোকে উমরার গুরুত্ব ও ফজিলত
عَنْ أبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهُ: أنَّ رَسُولَ الله صلى الله عليه وسلم قَالَ: «العُمْرَةُ إِلَى العُمْرَةِ كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُمَا، وَالحَجُّ المَبْرُورُ لَيْسَ لَهُ جَزَاءٌ إِلا الجَنَّةُ». متفق عليه.

১) হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,এক উমরাহ অন্য উমরাহ পর্যন্ত মধ্যবর্তী সবকিছুর কাফফারা। আর মাবরুর হজের একমাত্র প্রতিদান হলো জান্নাত। ( বুখারী ও মুসলিম )

عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُما قَالَ: قَالَ رَسُولُ الله صلى الله عليه وسلم: «تَابعُوا بَيْنَ الحَـجِّ وَالعُمْرَةِ فَإِنَّـهُـمَا يَــنْــفــِيَــانِ الــفَــقْــرَ وَالــذنــُوبَ كَمَا يــَنْــفِــي الــكِــيــرُ خــَبــَث الــحَــدِيــدِ». أخرجه النسائي.
২) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেনঃ তোমরা বার বার হজ্জ ও উমরাহ আদায় কর, কেননা এ দুটো দরিদ্রতা ও গুনাহকে সে ভাবে মুছে ফেলে, যে ভাবে কর্মকারের হাওয়া দেয়ার যন্ত্র লোহার ময়লাকে দূর করে থাকে। (নাসায়ী- হাদীস সহীহ)
রমজান মাসে ওমরাহর খরচ ও কষ্ট দুটিই বেড়ে যায়। তার পরও মহৎ ফজিলত পেতে এ মাসেই ওমরাহ পালনের নিয়ত ও চেষ্টা থাকা চাই। আল্লাহ সবাইকে তাওফিক দিন। আমিন।

রমজানে ওমরা করলে হজ করার সওয়াব

পবিত্র কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘এ সেই রমজান, যে মাসে মানবের হেদায়েতের জন্য কোরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে।’ (সূরা বাকারা : ১৮৫)।
এ মাসের সিয়ামকে আল্লাহ তায়ালা ফরজ করে বলেন, ‘সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাস পাবে সে যেন সিয়াম পালন করে।’ (সূরা বাকারা : ১৮৫)। হজরত তালহা বিন উবাইদুল্লাহ বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সা.)কে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল! আমার ওপর আল্লাহ কী কী রোজা ফরজ করেছেন, তা আমাকে বলে দিন।
উত্তরে তিনি বললেন, ‘রমজানের রোজা।’ লোকটি বলল, এছাড়া অন্য কিছু কি আমার কর্তব্য আছে? তিনি বললেন, না, তবে যদি তুমি নফল রোজা রাখ, তা হলে ভিন্ন কথা।’ (বোখারি : ১৮৯১)। অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, নবী করিম (সা.) এরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য এ মাসের সিয়াম পালন ফরজ করেছেন। (নাসাঈ)।

ফলে ফরজ সিয়াম রমজানে হওয়ার কারণে এ মাসের মর্যাদা আরও বেড়ে গেছে।

এ মাস এলে রাসুলে করিম (সা.) অতিশয় আনন্দিত হয়ে সাহাবাদের সুসংবাদ দিয়ে বলতেন, তোমাদের দ্বারে বরকতময় মাস রমজান এসেছে। (নাসাঈ)।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ঈমান আনল, সালাত কায়েম করল, জাকাত আদায় করল, রমজানে সিয়াম পালন করল, তার জন্য আল্লাহর হুকুম হল তাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেয়া। (বোখারি)।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, রমজানে প্রত্যেক মোমিন মুসলিমের দোয়া কবুল করা হয়।
(বাযযার, সহি আত-তারগিব ওয়াত-তারহিব : ৯৮৮, মুসনাদে আহমাদ : ৭৪৫০)। এ মাসের প্রতি রাত ও দিনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বহু মানুষকে দোজখ থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রমজানের প্রতি রাতে ও দিনে বহু মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন।
(আত-তারগিব ওয়াত-তারহিব, মুসনাদে আহমাদ : ৭৪৫০)।

এ মাসে সৎকর্মের প্রতিদান বহু গুণে বাড়িয়ে দেয়া হয়। যেমন- হাদিসে এসেছে, রমজানে ওমরা করলে একটি হজের সওয়াব পাওয়া যায়।

শুধু তাই নয়, বরং, রমজানে ওমরা করা আল্লাহর রাসুলের সঙ্গে হজ আদায়ের মর্যাদা রাখে। এমনিভাবে সব ইবাদত-বন্দেগিসহ সব সৎ কাজের প্রতিদান কয়েক গুণ বেড়ে যায়।

এ মাসে আমলের মাধ্যমে অনেক বেশি মুনাফা লাভ করা যায়।


এ প্রসঙ্গে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এক আনসারি মহিলাকে বললেন, তুমি কেন আমাদের সঙ্গে হজ করতে যাওনি? তিনি বললেন, আমাদের পানি বহনকারী দুটি মাত্র উট রয়েছে। একটিতে আমার ছেলের বাবা (স্বামী) ও তার ছেলে হজ করতে গিয়েছেন, অন্যটি পানি বহনের জন্য আমাদের কাছে রেখে গিয়েছেন। তিনি বলেন, রমজান এলে তুমি ওমরা করবে। কেননা এ মাসের ওমরা একটি হজের তুল্য। সহিহ মুসলিমের অন্য বর্ণনায় আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, রমজানে ওমরা একটি হজের তুল্য। (বোখারি : ১৭৮২, মুসলিম : ১২৫৬, মুসনাদে আহমাদ : ২০২৫)।

অন্য বর্ণনায় রয়েছে, উম্মে মাকিল (রা.) বলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি তো হজ করতে ইচ্ছুক। কিন্তু আমার উটটি দুর্বল। তিনি বললেন, তুমি রমজানে ওমরা করো। কেননা রমজানে ওমরা (সওয়াব হিসেবে) হজের তুল্য। (মুসনাদে আহমাদ : ২৭২৮৫)। হে আল্লাহ আমাদের রমজানে ওমরা করার তৌফিক দান করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *