আজকের শীর্ষ সংবাদ

ইসলামের সঙ্গে জীবন

Spread the love

ইসলামের মূল মর্মবাণী:

আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের প্রতি আনুগত্য ও বাধ্যতা স্বীকার করে নেয়া যে জীবনাদর্শের লক্ষ্য তার-ই নাম ইসলাম। জীবনের প্রতিক্ষেত্রে, প্রতিস্তরে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের বিধিনিষেধ পালন করা; তার সন্তুষ্টি অন্বেষণ করা এবং এ লক্ষ্যে নিজেকে বিলীন করে দেয়ার নামও ইসলাম।

ইসলামে সমাজ ও রাষ্ট্রকে অশান্তি, জুলুম ও বিশৃঙ্খলা থেকে মুক্ত রাখার নির্দেশ রয়েছে বলেই ইসলাম শান্তির আদর্শ। মানুষ যদি সত্যিই শান্তি পেতে চায় তবে তার নিজের ইচ্ছা মতো জীবন যাপন না করে আল্লাহর দেয়া বিধান মেনে চলতে হবে। তাই আল্লাহ তার প্রেরিত জীবন ব্যবস্থার নাম রেখেছেন ইসলাম।

ইসলাম শব্দের অর্থের মধ্যে বিশেষ গুণের পরিচয় পরিস্ফুটিত। ইসলামই শুধু ইসলামের তুলনা। নাম থেকেই বোঝা যায় যে, ইসলাম কোনো ব্যক্তিবিশেষের আবিষ্কার নয়, কোনো জাতির নামানুসারেও এ মতাদর্শের নাম হয়নি। ইসলাম নামটি আল্লাহ রাব্বুল আলামিন প্রদত্ত। ইসলাম নামটি অনেক গুরুত্ব বহন করে। ইসলামের সঙ্গে রয়েছে মানুষের জীবনের সুগভীর সম্পর্ক।

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থার নাম। সব সংঘাত সংঘর্ষের চিরন্তন ও মহাসমন্বয় হচ্ছে ইসলাম। জীবনাদর্শ, জীবন ব্যবস্থা ও জীবন বিধান হিসেবে ইসলামে রয়েছে সব সমস্যার সঠিক সমাধান। এতে রয়েছে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিটি সমস্যার সমাধান আর মৃত্যুর পর আখেরাতের অনন্ত জীবনে নিশ্চিত সুখ-শান্তি লাভের উপায়।

 

ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান 

 

কিছু লোক ইসলাম ধর্মের পেছনে লেগে থাকেন। এতে তেমন আশ্চর্য্য হওয়ার কিছু নেই। কারণ, এটা সর্বকালের বাস্তবতা। ইসলাম ধর্মের সামান্যতম ভুল বা গলদ আবিষ্কারে তারা প্রতিনিয়ত নিখুতভাবে চেষ্টা চালিয়ে যান। এসব কাজ করতে গিয়ে তাদের কুরআন গবেষনা করতে হয়। হাদিস পড়তে হয়। পড়তে হয় মানে কি? গলদঘর্ম হতে হয় রীতিমত। যৌক্তিক হোক আর অযৌক্তিক, সঠিক হোক অথবা না হোক, তারা তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা প্রচেষ্টায় এই কাজের পেছনে নিজেদের একরকম উৎসর্গ করেন। তাদের ধৈর্য্য দেখে মাঝে মধ্যে আশ্চর্য না হয়ে পারা যায় না। বেশিরভাগ সময়েই এরা মিথ্যের আশ্রয় নিয়ে, মিথ্যেকে উপজীব্য করে, প্রতারণার অপকৌশলে, সত্যকে আড়াল করে ইসলাম ধর্মের ভুল প্রমান করতে আসতে দেখা যায়। বিশ্বজুড়ে সমাদৃত গুণী জ্ঞানী ইসলামী স্কলার, মুহাদ্দিস, মুফাসসির, ফকিহ এবং উলামায়ে মুতাকাদ্দিমীন – কুরআন হাদিসের জ্ঞানে যাদের পারদর্শীতা প্রবাদ তুল্য, তাদের তাফসীর, হাদিস ব্যাখ্যার ভেতরে ভুল খুঁজতে আসেন। আসলে এদের এসব কাজ আমাকে যুগপত কষ্ট দেয় এবং হাসায়ও। কারণ, কষ্ট পাই এজন্য যে, এই অনধিকার চর্চার মাধ্যমে তারা কিছুটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সুযোগ পাওয়ার ফলে কিছু সাধারণ মানুষ হয়তো সামান্য বিভ্রান্তিতে পড়ে যান। হাসি পায় তাদের মিথ্যে কসরত দেখে। সূর্যের সামনে প্রতিবন্ধকতা দিয়ে পৃথিবীতে তার আলোর আগমন এবং তাপের বিকিরণ ঠেকানোর প্রচেষ্টা যেমন চরম হাস্যকর, ইসলাম ধর্মের নানা বিষয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করার এদের শত অপচেষ্টাও ঠিক তেমনই।

সম্প্রতি একজন পোস্ট দিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন যে, ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান বলার যৌক্তিকতা ও ভিত্তি কি? তার অনুসন্ধানের আলোকে তিনি বলেছেন যে, এই কথাটা না কি কুরআনে নেই। সুতরাং, তার প্রশ্ন- এই যে আলেম উলামাগণ কথায় কথায় বলে থাকেন যে, Islam is the complete code of life তথা, ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান এ কথার ভিত্তি কি?

ভদ্রলোকের নাম বলতে চাই না। ভিন্ন মতের হলেও তিনি আমার বা আমাদের শত্রু কখনো নন। তার প্রতি আমাদের আন্তরিকতাপূর্ণ শুভকামনা সবসময়ই ছিল এবং তা বজায় রেখেই বলতে চাই, তার ইতোপূর্বেকার অধিকাংশ লেখা প্রমান করে যে, তিনি ইসলাম ধর্মের বিবিধ বিষয়ের ভুল ধরার কাজে কতটুকু পরিমান আত্মনিবেদিত!

যা-ই হোক, তার কাজ তিনি করে যাবেন এটাই স্বাভাবিক। তবে, অস্বাভাবিক যেটা তা হচ্ছে, তিনি সাধারণতঃ যুক্তির ধার তেমন একটা ধারেন না। তাকে কোনো কিছু বুঝাতে পারবেন, এই যুগে এমন কেউ থাকতে পারেন, বিশ্বাস করা কঠিন। কারণ, তাকে কুরআনুল কারিমের প্রাথমিক জামানার বরেণ্য মুফাসসিরগণের তাফসীরকেও এটা তো ‘তাফসীর, কুরআন তো নয়’, বলে পাশ কাটিয়ে যেতে দেখা যায়। তাফসীরে ইবনে কাসির, বায়জাভি, জালালাইনসহ প্রাচীন বিশুদ্ধ তাফসীর প্রণেতাগণের চেয়েও কুরআনের মর্ম যদি বর্তমান যুগের কেউ বেশি বুঝার দাবি করেন, তাদের তাফসীরের ভুল ধরার সাহস করে বসেন, এত বড় মুফাসসিরকে(!) বুঝাতে যাবে, এমন সাধ্য কার থাকতে পারে? এমন বুকের পাটাই বা কার হতে পারে?

যাক, তার হয়তো অনেক জ্ঞান, যা ইসলামের প্রাথমিক যুগের মহান তাফসীরকারণের ছিল না(!)। আমরা দোআ করি, আল্লাহ তাআ’লা তার জ্ঞানকে আরও বাড়িয়ে দিন। আমরা এই নিবন্ধে পবিত্র কুরআন এবং হাদিসের আলোকে তুলে ধরার চেষ্টা করবো যে, Islam is the complete code of life তথা, ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান কথাটি বলা বিধেয় কি না।

দ্বীন ইসলামকে যাদের ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখতে ইচ্ছে, ইসলাম ধর্মের পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান হওয়ার বিষয়টি তাদের পক্ষে মেনে নিতে কষ্ট হওয়া খুবই স্বাভাবিক, যদিও কুরআন হাদিসের আলোকে এই বক্তব্য যতই প্রমানিত হয়ে থাকুক। আলহামদুলিল্লাহ, আমরা বক্ষমান নিবন্ধে কুরআন হাদিসের আলোকে আশা করি, বিষয়টি সহৃদয় সম্মানিত পাঠকদের সামনে দলিল প্রমান সহকারে ক্লিয়ার করতে পেরেছি। এরপরেও যদি উক্ত পক্ষের ভাইয়েরা গায়ের জোরে তাদের আপত্তি চালিয়ে যেতে চান তাহলে তাদের সাথে অর্থহীন তর্ক-বিতর্কের নামে কালক্ষেপন করার কোনো ইচ্ছে আমাদের আদৌ নেই। তবে, আমরা প্রত্যাশা রাখতে চাই, তারা ফিরে আসবেন, তারা বেরিয়ে আসবেন বিভ্রান্তির বেড়াজাল থেকে এবং ইসলামের পেছনে অহেতুক, অন্যায়ভাবে লেগে থাকার স্বভাব পরিহার করে দ্বীনে হক এর আলোয় আলোকিত হবেন।

 

 

দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম

 

আল্লাহ তায়ালা জান্নাতের বিনিময় মুমিনের জীবন ক্রয় করে নিয়েছেন। পবিত্র আল-কুরআনে আল্লাহ তায়ালা মুমিনদের উদ্দেশ্য করে বলেন, বলুন, আমার নামাজ, আমার সবরকম ইবাদত, আমার জীবন, আমার মরণ সবকিছুই আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের জন্য। (সূরা আন’আম: ১৬২)। তাই মুমিনের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্টি অর্জন করা। পবিত্র আল-কুরআন ও হাদিসের বিভিন্ন জায়গায় আল্লাহ তায়ালা মুমিনের জীবন কেমন হবে সে বিষয়ে আলোচনা করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘সে তো শুধু মহান রবের সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে এ কাজ করে। অবশ্যই তিনি ( তার উপর) সন্তুষ্ট হবেন। (সূরা লাইল : ২০-২১)।

তারা সর্বদা আল্লাহর ওপর ভরসা করে। পবিত্র আল-কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের সব গোনাহ মাফ করবেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা যুমার : ৫৩)। বর্তমানে আত্মহত্যা একটি সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মানুষ আত্নহত্যার পথ বেঁচে নিয়েছে। কিন্তু আল্লাহর বান্দার নিকট জীবন খুবই মূল্যবান নেয়ামত।
তারা বিশ্বাস করে, জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত আল্লাহর রহমতের দরজা খোলা আছে। এজন্য তাঁরা আল্লাহর দিকে একমুখী হয়। তাঁদের সামনে আল্লাহ তায়ালার নাম নিলে ভয়ে তাদের অন্তর কেঁপে উঠে। পবিত্র আল-কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘সাচ্চা ঈমানদার তো তারাই আল্লাহকে স্মরণ করা হলে যাদের অন্তর কেঁপে উঠে আর আল্লাহর আয়াত যখন তাদের সামনে পড়া হয় তাদের ঈমান বেড়ে যায় এবং তাঁরা নিজেদের রবের উপর ভরসা করে।’ (সূরা আনফাল : ২)। এছাড়া জীবনে কখনো জিনা ব্যভিচারে লিপ্ত, পিতা মাতার অবাধ্য, আমানতের খিয়ানত করা যাবে না। সর্বদা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে, হালাল উপায়ে উপার্জন, মানুষের হক নষ্ট করে না জীবন পরিচালনা করতে হবে। পরিশেষে, আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে জীবনের মূল্য বুঝার তৌফিক দান করুন।

 

ইসলামী পারিবারিক জীবন

 

নারী-পুরুষের পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতেই গড়ে ওঠে একটি পরিবার। ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় পরিবারের গুরুত্ব অপরিসীম। পরিবার হচ্ছে ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় একটি পূর্ণাঙ্গ ইউনিট বা শাখা। পরিবারের জন্ম তথা উৎপত্তি বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে। ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গির প্রেক্ষিতে সামাজিক জীবনের প্রাথমিক বুনিয়াদ বৈবাহিক সম্পর্কের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এই জন্য ইসলাম সমাজে বিবাহ প্রথাকে সহজতর করে দিয়েছে। কতিপয় নিকটাত্মীয় এবং পৌত্তলিক নারী ব্যতীত সকলের সাথে বিবাহ বন্ধনকে বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। অতঃপর পারিবারিক জীবনে যদি কোন প্রকার বিঘ্নের সৃষ্টি হয়, যাতে কোন অবস্থাতে ঐক্যবিধান সম্ভব হয়ে না ওঠে, তাহলে পুরুষের জন্য তালাক এবং স্ত্রীর জন্য ‘খোলা’র (দেনমোহর মাফ করে দেয়া বা অন্য কোন অর্থ বা সম্পদ দানের মাধ্যমে স্বামীর  নিকট তালাক গ্রহণ)  অধিকার ইসলামে স্বীকৃত রয়েছে। এ ভাবেই ইসলাম নারী-পুরুষের অধিকারকে সংরক্ষণ করেছে। ইসলাম পবিত্র বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে সামাজিক পবিত্রতা রক্ষার যে সুন্দরতম বিধান দিয়েছে তার ব্যতিক্রমে সামাজিক পবিত্রতা ক্ষুণ্ন হওয়া স্বাভাবিক। তাই সে এ পন্থায় নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার ফলে উদ্ভূত সমস্যা প্রতিরোধের ব্যবস্থা করেছে এবং বিবাহ পদ্ধতিকেও সহজ করে দিয়েছে। এমনকি এক স্ত্রীতে যদি কারও বাস্তব অসুবিধা থাকে সেক্ষেত্রে তাকে একাধিক স্ত্রী গ্রহণেরও অনুমতি দিয়েছে। তবুও যদি কেউ শরীয়তের নিয়ন্ত্রণসীমা অতিক্রম করে অবৈধ যৌন সম্ভোগে লিপ্ত হয় তাহলে তার জন্য কঠিনতম শাস্তির ব্যবস্থা ইসলামে রয়েছে। ইসলামী শরীয়ত এরূপ অপরাধীর জন্য কশাঘাত এবং প্রস্তর আঘাতে মৃত্যুদণ্ডের বিধান দিয়েছে।

পারিবারিক জীবন এবং নারী-পুরুষের দায়িত্ব

পারিবারিক জীবন এবং নারী-পুরুষের কর্মসীমা ও দায়িত্ব সম্পর্কে ইসলাম বিশেষ কতগুলো পথনির্দেশ প্রদান করেছে। নিম্নে এর সংক্ষিপ্ত দিকগুলো আলোচনা করা হলো:

ক. আল্লাহ্ পুরুষকে পরিবার তথা সংসারের অভিভাবক করে সৃষ্টি করেছে। শুধু তা-ই নয়, অর্থোপার্জন এবং সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক জীবনের গুরুদায়িত্বও অর্পিত হয়েছে পুরুষের ওপর। মহান আল্লাহ বলছেন:

﴿ٱلرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى ٱلنِّسَآءِ بِمَا فَضَّلَ ٱللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ وَبِمَآ أَنْفَقُواْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ﴾

“পুরুষরা নারীদের ওপর দায়িত্বশীল (কর্তৃত্বের অধিকারী) এ কারণে যে, আল্লাহ তাদের কতককে (পুরুষকে) কতকের (নারীর) ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন  এবং যেহেতু তারা (নারীদের জন্য) তাদের সম্পদ থেকে ব্যয় করে থাকে।” (নিসা: ৩৪)

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *