আজকের শীর্ষ সংবাদ

যশোরে ৩২ মামলার আসামি  নিহত রমজানের উত্থান যেভাবে

যশোরে ৩২ মামলার আসামি নিহত রমজানের উত্থান যেভাবে
Spread the love

রমজান শেখ (৩৪) যশোর শহরের রেলগেট পশ্চিম পাড়ার বাসিন্দা। গত শুক্রবার রাতে যখন তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়, তখন পুলিশ জানায়, তার বিরুদ্ধে থানায় ৩২টি মামলা রয়েছে। ২০১১ সালে তিনি প্রথমবারের মতো চাঁদাবাজি ও লাঞ্ছিত মামলায় অভিযুক্ত হন। এরপর শাসকদের ছত্রছায়ায় তার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের পরিধি বেড়ে যায়। গত ১৩ বছরে ডাকাতি, ডাকাতি, মাদক ব্যবসা, অস্ত্র বহন ও হত্যার অভিযোগে আরও ৩১টি মামলা হয়েছে।

এটা কিভাবে শুরু হল?

রমজান যশোরের পশ্চিম উপশহরের বাসিন্দা ফয়েজ শেখের ছেলে। যশোর কোতয়ালী থানা সূত্রে জানা গেছে, তাদের থানায় চাঁদাবাজি ও মারামারির অভিযোগে রমজানের বিরুদ্ধে প্রথম মামলা হয়। তিনি নগর যুবলীগের বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক মেহবুব রহমান ওরফে ম্যানসেলের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। সরকারি কাজে বাধা দেওয়া, নারী সরকারি কর্মকর্তাকে মারধর ও লাঞ্ছিত করার মামলায় মেহবুব বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজি, মাদকসহ ১৫টি মামলা রয়েছে।

যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল ইমরান সাংবাদিকদের জানান, রমজানের বিরুদ্ধে হত্যাসহ ৩২টি মামলা রয়েছে। তবে রমজানের বিরুদ্ধে ৩১টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২টি মামলা হত্যা, ৭টি মামলা অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনে, ৬টি মামলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে, ৫টি মামলা বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে, ৪টি মামলা ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের প্রস্তুতির অভিযোগে, ৬টি মামলার অভিযোগ রয়েছে। মারপিট ও ১টি মামলায় সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

রমজানের মা রেখা বেগম দাবি করেন, রমজানের বিরুদ্ধে ২৭টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে দুটি মামলা থেকে তাকে খালাস দিয়েছেন আদালত। বাকি ২৫টি মামলায় ছেলে জামিন পেয়েছে। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ছিল না।

দাপটের নেপথ্যে

স্থানীয় একাধিক বাসিন্দার মতে, তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী রমজান রেলগেট এলাকায় মেহবুবের আধিপত্য বিস্তারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিল। রেলগেট এলাকার একাধিক হত্যা মামলার আসামি পিচ্চি রাজা ওরফে রাজার সঙ্গেও রমজানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মেহবুব, রমজান ও রাজা যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

ওই বাসিন্দাদের মতে, রাজা কাজী নাবিল বিরোধী বলয়ে যোগ দিলে রমজানের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। রাজা যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের অনুসারী হিসেবে পরিচিত পৌর কাউন্সিলর আলমগীর কবির ওরফে হাজী সুমনের ঘনিষ্ঠ হন। এ বিষয়ে জানতে কাউন্সিলর সুমনকে ফোন করা হলে তিনি তোলেননি।

কাউন্সিলর সুমন ও রাজা সম্পর্কে শাহীন চাকলাদার বলেন, সুমন একজন পৌর কাউন্সিলর। সে আমাকে নিয়ে রাজনীতি করে, এটা ভালো। কিন্তু পিচ্চি রাজা নামে কাউকে চিনি না। আজ প্রথম তার নাম শুনলাম।

রমজানের মা রেখা বেগম বলেন, আমার ছেলে রমজানকে সন্ত্রাসীরা ব্যবহার করেছে। মেহবুবের সঙ্গে থাকতেন রমজান। সন্ত্রাসীরা আমার ছেলেকে হামলা, খুন, চাঁদাবাজির জন্য ব্যবহার করেছে। আমার ছেলে এমপি কাজী নাবিলের সঙ্গে রাজনীতি করত। আর পিচ্চি রাজা কাউন্সিলর সুমনের সঙ্গে রাজনীতি করেন। আমি এটা বুঝতে পেরেছি এবং আমার ছেলেকে তাদের কাছ থেকে সরিয়ে নিয়েছি। রমজান মাছ চাষ ও ইট-বালুর ব্যবসা করতেন।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে একাধিকবার ফোন করলে সাংসদ কাজী নাবিল আহমেদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে হোয়াটসঅ্যাপে একটি ছোট বার্তা পাঠানো হয়। কোনো সাড়া পাইনি।

রাজা-রমজানের দ্বন্দ্ব

যশোর কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পিচ্চি রাজা ওরফে রাজার সঙ্গে তার বিরোধ ছিল রমজানকে হত্যার মূল কারণ। গত ৫ মার্চ যশোর শহরের খড়কি হাজমপাড়া এলাকা থেকে ইয়াবা রাজার স্ত্রী রূপা বেগমকে (২০) আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠায় পুলিশ। রাজাকে সন্দেহ করে রমজান পুলিশকে তথ্য দিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে প্রতারণা করেছে। ফলে রাজা ও তার লোকজন রমজানকে ছুরিকাঘাতে হত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছে।

রমজানের পরিবার, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্বাক্ষী সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার রাত ১০টার দিকে যশোর শহরের রেলগেট এলাকার বাসা থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হয় রমজান। বাড়ির সামনে খাবার নিয়ে আসা ৬ থেকে ৮ জন তার পথ আটকে ছুরি নিয়ে পালিয়ে যায়। রমজানের চিৎকার শুনে তার স্ত্রীসহ বাড়ির লোকজন এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

হাসপাতালে রমজানের স্ত্রী পপি খাতুন সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, “পিচ্চি রাজা মানুষ হত্যাসহ নানা অপরাধ করতো এবং আমার স্বামীর কাছে আশ্রয় চাইতো। কিন্তু আমার স্বামী তাকে জায়গা দিতে চায়নি। ভয়ে আমার স্বামী পিচ্চি রাজাকে ধরিয়ে দিতে পারে। পুলিশের কাছে, পিচ্চি রাজা তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে।

রমজানের মা রেখা বেগম বাদী হয়ে রাজাসহ ১৩ জনের নাম ও পরিচয় উল্লেখ করে গত রোববার কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। বাদীর অভিযোগ, রমজান কেন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ছেড়েছেন, কেন তিনি তাদের সঙ্গে যাচ্ছেন না; এ জন্য চোরমারা রমজানকে হত্যার জন্য দিঘী পাড়ের কুদরত নামে এক ছোট রাজাকে এক লাখ টাকা দেন। রাজা সেই টাকা পেয়ে আর কে হত্যা করলেন

আরো পড়ুন>>তিনজন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল বরখাস্ত, ভোট গণনার মাজারির দুর্ঘটনায়

One thought on “যশোরে ৩২ মামলার আসামি  নিহত রমজানের উত্থান যেভাবে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *