আজকের শীর্ষ সংবাদ

শাহী গালিচার মূল্য

Spread the love

১০. মুসলমানদের হাতে পারস্য বিজয়ের পর মূল্যবান গালিচা যার ওপর ইরানের বাদশাহ বসতেন, গণিমতের মালের অংশ হিসেবে মুসলমাদের হস্তগত হয়। এই গালিচা কোন কাজে লাগানো যায়, এ বিষয়ে হযরত ওমর রাযি, পরামর্শ চাইলেন। কেউ পরামর্শ দিলেন, বিদেশী দূতদের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় খলীফা এই গালিচায় বসবেন। কেউ বললেন, এই গালিচায় বসে খলীফা দরবার পরিচালনা করবেন। কেউ অন্য পরামর্শ দিলো। সকলের আগ্রহ লক্ষ করে ওমর রাযি. বুঝতে পারলেন, তাদের দৃষ্টিতে এই গালিচার মর্যাদা অনেক বেশি। খলীফা কাঁচি দিয়ে গালিচা টুকরো টুকরো করে সাহাবীগণের মধ্যে বিতরণ করলেন। হযরত আলী রাযি.-এর ভাগে গালিচার যে টুকরো এসেছিল সেটা ৪০ হাজার টাকায় বিক্রয় হয়।

শাহী গালিচার মূল্য
শাহী গালিচার মূল্য

হযরত ওমর রাযি. এই দামি গালিচাকে এভাবে টুকরো টুকরো করে এই বার্তা দিলেন যে, দুনিয়ার ঐশ্বর্য মুসলমানদের কাছে কোনো মূল্য রাখে না। মুসলমান সম্পদলাভের উদ্দেশ্যে জিহাদ করে না। জিহাদের লক্ষ্য আল্লাহকে খুশি করাই হয়ে থাকে।

-মাওয়ায়েযে ফকীহুল উম্মাত: ৬/৬৯।

গালির জবাব ফেরেশতা দেন

১১. হযরত আবু-হুরায়রা রাযি. বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি হযরত আবু-বকর রাযি.-কে গালাগাল করছিল। নবীয়ে আকরাম সেখানে উপস্থিত ছিলেন। (আবু-বকরের ধৈর্য এবং ওই ব্যক্তির সীমালঙ্ঘন দেখে) নবীয়ে আকরাম অবাক হয়ে মুচকি হাসছেন।

ওই ব্যক্তি যখন অনেক বেশি গালাগাল করে সীমা অতিক্রম করে যায়, তখন হযরত আবু-বকর রাযি, তার জবাবে দু-চারটি কথা শুনিয়ে দেন। আবু-বকরের জবাব শুনে নবীয়ে আকরাম নারাজ হয়ে মজলিস থেকে চলে যান। এটা দেখে হযরত আবু-বকর নবীজির পেছনে ছুটে গিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেন, ওই ব্যক্তি আপনার উপস্থিতিতে আমাকে গালি দিচ্ছিলো। যখন আমি তার গালির জবাবে দু-একটি কথা বললাম, আপনি নারাজ হয়ে উঠে আসলেন। তার কারণ কী?

নবীয়ে আকরাম ত্রেঃ বললেন, তোমার সঙ্গে (আল্লাহর পক্ষ থেকে) একজন ফেরেশতা অবস্থান করছিলেন, যিনি তোমার হয়ে তার গালির জবাব দিচ্ছিলেন। যখন তুমি নিজে জবাব দিতে শুরু করলে তখন শয়তান এসে মাঝে অবস্থানগ্রহণ করে। আবু-বকর। তুমি আল্লাহর জালেম বান্দা না হয়ে মাজলুম বান্দা হয়ে যাও। তুমি আদমের দুই পুত্রের মধ্যে ভালোজনের অনুসারী হয়ে যাও। যার ওপর কেউ জুলুম করে এবং সে ক্ষমা করে দেয়, আল্লাহ সম্মান বৃদ্ধি করে তার মদদ করেন।

-ইলম আওর হিলম: ৪৩, মিরকাত: ৯/৩০৩ থেকে উদ্ধৃত।

শত্রুকে নাগালে পেয়ে

১২. ইবনে মুলজিম, যে হযরত আলী রাযি.-কে হত্যা করেছিল, হযরত আলী রাযি, খলীফা থাকাকালে কোনো একটি কাজে হযরত আলীর খেদমতে হাজির হয়। হযরত আলী রাযি. তার কাজ করে দেন এবং সঙ্গীদের বলেন, এ আমাকে হত্যা করবে। একথা শুনে একজন বললেন, আপনি এক্ষুনি তাকে মেরে ফেলুন। হযরত আলী রাযি. জবাব দিলেন, ওকে মেরে ফেললে আমাকে হত্যা করবে কে? আর যে এখনো আমাকে হত্যা করেনি তাকে আমি কোন বিচারে হত্যা করবো?

এই অভাগা ইবনে মুলজিম হত্যার উদ্দেশ্যে যখন হযরত আলী। রাযি.-এর ওপর হামলা চালায় এবং তাকে গ্রেপ্তার করা হয়, তখন আহত অবস্থায় হযরত আলী রাযি. বলেন, ওকে হত্যা করো না, বন্দি করে রাখো। ভালো খাবার খাওয়াও। নরম বিছানায় শোয়ার ব্যবস্থা করো। ওর আঘাতে যদি আমি মারা যাই তবে কেসাস-স্বরূপ তাকে মৃত্যুদণ্ড দেবে। আর যদি আমি সুস্থ হয়ে যাই, তবে আমার ইচ্ছা, তাকে ক্ষমা করে দিতে পারি অথবা প্রতিশোধ গ্রহণ করতে পারি।

-হুদুদে এখতেলাফ: ৯৩, আল-এতেদাল: ২৩৯ থেকে উদ্ধৃত।

আলীর মৃত্যুতে মুয়াবিয়ার শোক

১৩. আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী রাযি.-এর শাহাদতের সংবাদ পেয়ে হযরত আমীরে মুয়াবিয়া কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তখন আমীরে মুয়াবিয়ার স্ত্রী বলেন, হযরত আলীর মৃত্যুসংবাদ পেয়ে আপনি এখন কাঁদছেন অথচ আপনি তাঁর সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন। হযরত মুয়াবিয়া রাযি.

বলেন, তোমার ওপর আফসোস হচ্ছে, এসব কী বলছো? তুমি জানো না আজ আমাদের কাছ থেকে ইলম, মর্যাদা এবং ফিক্হ্ন বিদায় গ্রহণ করেছে।

-হদুদে এখতেলাফ: ৭৭, আল-বেদায়া: ৮/১৩০ থেকে উদ্ধৃত।

সুন্নত অনুসরণে নির্ভীক

১৪. হুদায়বিয়ার চুক্তির সময় হযরত ওসমান রাযি, নবীয়ে আকরাম রে:-এর প্রতিনিধি হিসেবে মক্কায় গমন করেন। হযরত ওসমান রাযি.- এর লুঙ্গি সুন্নত মোতাবেক গোড়ালির হাড় থেকে উঁচু ছিল। মক্কার নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনায় যাওয়ার সময় তার চাচাতো ভাই পরামর্শ দিলেন, লুঙ্গি আরেকটু ঝুলিয়ে পরুন। নতুবা নেতারা হাসাহাসি করবে। তখন হযরত ওসমান রাযি, বললেন, লুঙ্গি উঁচুতে উঠিয়ে পরা আমার নবীর সুন্নত। ওদের হাসি-ঠাট্টার ভয়ে পিয়ারা নবীর সুন্নত ত্যাগ করতে পারি না।

মাজালিসে মুফতিয়ে আজম: ৮৯।

কে বড়?

১৫. হযরত আব্বাস রাযি.-কে প্রশ্ন করা হয়, বড় কে, আপনি না রাসূলে আকরাম এরা? আব্বাস রাযি. বলেন, বড় তো তিনি, আর আমার বয়স বেশি।

সততার বল

-মুমিনউ কি যেহানত কে কিসে। ৫৪।

১৬. হযরত আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের রাযি, ছোটবেলা থেকেই খুব বুদ্ধিমান ছিলেন। শিশুকালে অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলছিলেন হঠাৎ হযরত ওমর রাযি.-এর আগমন ঘটে। তাঁকে দেখে শিশুরা পালিয়ে যায়। কিন্তু আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের ঠায় দাঁড়িয়ে থাকেন। অন্যদের সঙ্গে পালাননি। এটা দেখে হযরত ওমর বললেন, তুমি পালাওনি কেন? তিনি বললেন, আমিরুল-মুমিনীন। আমি পালাবো কেনো, আমি তো কোনো দোষ করিনি যে, ভয় পাব। আর রাস্তাও সংকীর্ণ নয় যে, আপনাকে পথ করে দেব।

মুমিনউ কি যেহানত কে কিসে: ৫৮।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *