বিশ্ব বিখ্যাত ক্রিপ্টো কারেন্সি বিটকয়েনর দাম এখন সর্বোচ্চ রেকর্ড ছাড়িয়ে গেল। এই যাবত কালে বিটকয়েন এর দাম এতটাও হয়নি। গত একদিন আগে বিটকয়েনের দাম ৬৯ হাজার ডলারে পৌঁছে গিয়েছিল এরপর আবার কিছুটাও কমেছে। এখন বিটকয়েনের দাম ৬৭ হাজার ডলারে নেমে গেল। এর প্রায় তিন বছর আগে ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে বিটকয়েনের দাম ছিল সর্বোচ্চ ৬৮ হাজার ৯৯৯ ডলার।
লন্ডন ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছেন গত বছরের অক্টোবর মাসের পর থেকে এই পর্যন্ত বিটকয়েনের দাম বেড়েছে ৬০%, তার মধ্যে শুধুমাত্র ফেব্রুয়ারি মাসে বেড়েছে ৪৪%।
বিটকয়েনের এই মূল্যবৃদ্ধি মোটেও অপ্রত্যাশিত ছিল না কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)এই বছরের শুরুতেই ইটিএফের মাধ্যমে বিটকয়েনে বিনিয়োগের অনুমোদন দেওয়ার পর থেকেই ধারণা করা হয় বিটকয়েনের দাম বাড়বে। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহার হ্রাস করা হবে। বাজারে এমন তথ্য ছড়িয়ে পড়ার পর বিনিয়োগকারীরা বিটকয়েনের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। সে জন্য বিটকয়েনের এই মূল্যবৃদ্ধি তেমন একটা অস্বাভাবিক নয় বলেই মনে করেছেন বিশ্লেষকেরা।
ক্রিপ্টো মার্কেটের প্রধান নির্বাহী নাথান ম্যাকলে লন্ডন ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, বিটকয়েনের দাম এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ চূড়ায় ওঠার বিষয়টি ক্রিপ্টোকারেন্সির জগতে এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। তিনি আরো জানান বড় বড় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা একসময় বিটকয়েনে আসতে চাইতেন না। কিন্তু এখন তারা পরিস্থিতি বুঝতে পেরে জানুয়ারির পর থেকে ক্রিপ্টো জগতের দিকে একেবারে ঝাপিয়ে পড়লেন।
মার্চের প্রথম সপ্তাহ শেষে ১০ টি বড় বড় প্রতিষ্ঠান বিটকয়েনে বিনিয়োগ করেছে ২২০ কোটি ডলার, এর মধ্য দিয়ে ব্ল্যাকরকের বিটকয়েন ট্রাস্টেই বিনিয়োগ করা হয়েছে ২০০ কোটি ডলারের বেশি।
এটি মূলত ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহার হ্রাস করবে, এ খবরে পেয়ে বিনিয়োগকারীরা এখন ডিজিটাল মুদ্রার দিকে বেশি ঝুঁকে পড়েছেন। তার সঙ্গে সোনার দামও বাড়ছে। সুদহার কমলে যুক্তরাষ্ট্রে বন্ডের সুদহারও কমে যায়, সে জন্য বিনিয়োগকারীরা এখন থেকে অন্যান্য মাধ্যমেও বিনিয়োগ বাড়িয়ে দিচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের Equity capital এর প্রধান অর্থনীতিবিদ স্টূয়ার্টকোল সংবাদ মাধ্যম রয়টার্সকে বলেন, উচ্চ সুদহার এবং ঝুঁকি কমানোর মাধ্যম হিসেবে বিনিয়োগকারীরা এখন সোনার চেয়ে বিটকয়েনকে প্রাধান্য দিচ্ছে। এ ছাড়া বর্তমান বাজারে বিটকয়েনের স্বল্পতার কারণেও বিটকয়েনের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। যদিও অনেক বিনিয়োগকারী মনে করেন থাকেন যে, বিটকয়েনের বাজার অনেকটাই ফাটকাবাজির মতো।
যারা যাই বলুক না কেন, বর্তমান বাজারে বড় বড় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা এখন বিটকয়েনের দিকে ঝুঁকে পড়েছে।
এর আগেও কোভিদ-১৯ মহামারির সময়ও বিটকয়েনের দাম বেড়েছিল, কিন্তু ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রাস্ফীতি মোকাবেলায় ব্যাংক নীতি সুদ্ধার বৃদ্ধি করে দেয় যার ফলে বিজ্ঞানী বিনিয়োগকারীদের মূলধন কমে যায়। সেই সাথে অন্য আরেকটি ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ সাইট এফটিএক্স ধসে পড়ে সেই সাথে যুক্তরাষ্ট্র সহ বিশ্বের অন্যান্য কয়েকটি ব্যাংক ধসে পড়ায় বিটকয়েন সহ আরো অন্যান্য ক্রিপ্টো কারেন্সির মার্কেট ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে।
এই ধারাবাহিকতাই, ২০২৩ সালে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড থেকে মন্তব্য করা হয়েছিল যে ২০২৪ সালের শেষের দিকে বিটকয়েনের দাম এক লক্ষ ডলারে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিটকয়েন নিয়ে এমন মন্তব্য প্রথম নয় এর আগেও অনেক মন্তব্য করা হয়েছিল। ২০২২ সালে বলা হয়েছিল বিটকয়েনের দাম ৩ লাখ ডলার ছাড়িয়ে যাবে কিন্তু তা না হয়ে হয়েছিল ১৬০০০ ডলার এসেছিল। এছাড়াও আরো অনেক মন্তব্য করা হয়েছিল কিন্তু সবগুলো ফলেনি, দেখা যাক এবারের ভবিষ্যতে কি হতে পারে।