আজকের শীর্ষ সংবাদ

যেভাবে করলা চাষ করলে অধিক ফলন পাবেন

যেভাবে করলা চাষ করলে অধিক ফলন পাবেন
Spread the love

বপন/রোপন ঃ বছরের যে কোন সময় করলার চাষ সম্ভব হলেও এদেশে প্রধানত খরিফ মৌসুমেই করলার চাষ হয়ে থাকে। ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে যে কোন সময় করলার বীজ বোনা যেতে পারে। কেউ কেউ জানুয়ারী মাসেও বীজ বুনে থাকে কিন্তু এ সময় তাপমাত্রা কম থাকায় গাছ দ্রুত বাড়তে পারে না, ফলে আগাম ফসল উৎপাদনে তেমন সুবিধা হয় না।

যেভাবে করলা চাষ করলে অধিক ফলন পাবেন
যেভাবে করলা চাষ করলে অধিক ফলন পাবেন

ডেস্ক প্রতিবেদন, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: করলা বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সবজি। স্বাদে তিক্ত হলেও সকলের নিকট এটি প্রিয় সবজি হিসেবে পরিচিত। আর সঠিক পদ্ধতিতে করলা চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।

তাই করলা চাষে অধিক ফলন পেতে হলে আমাদের সঠিক পদ্ধতি জানতে হবে।

মাটি : জল জমেনা এ ধরনের প্রায় সব রকমের মাটিতেই করলার চাষ করা যায়। তবে জৈব পদার্থযুক্ত দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি করলা চাষের জন্য বেশি উপযোগী।

জলবায়ু : বাংলাদেশের আবহাওয়া করলা চাষের জন্য উপযোগী। উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় করলা ভালো জন্মে। তবে ফুল আসার সময় অত্যাধিক বৃষ্টিপাতে ফল ধরা ব্যাহত হয়।

জাত : বাংলাদেশে করলার বেশ কয়েকটি উচ্চফলনশীল জাত রয়েছে। এসব জাতের মধ্যে বারি করলা-১ এবং বিএডিসির গজ করলা উল্লেখযোগ্য। এছাড়া রয়েছে আরো কয়েকরকমের হাইব্রিড জাত। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট কৃর্তক উদ্ভাবিত বারি করলা-১ একটি উচ্চফলনশীল জাত। এ জাতের একটি গাছে ২০-৩০টি করলা ধরে। হেক্টরপ্রতি ফলন প্রায় ৩০ টন। বিএডিসির গজ করলা নামের রয়েছে একটি উচ্চফলনশীল করলার জাত। এ জাতের একটি গাছে ১৫-২০টি ফল ধরে। হেক্টরপ্রতি ফলন প্রায় ২৫ টন। এসব ছাড়াও করলার আছে বেশ কয়েকটি হাইব্রিড জাত। যেমন : বুলবুলি, টিয়া, প্যারট, কাকলি, তাজ-৮৮, গ্রিনস্টার, গৌরব, প্রাইড-১, প্রাইড-২, গ্রিন রকেট, হীরক, মানিক, জয়, রাজা, প্রাচী ইত্যাদি।

জীবন কাল: মোট জীবনকাল প্রায় চার থেকে সারে চার মাস। তবে জাত ও আবহাওয়াভেদে কোন কোন সময় কম বেশী হতে পারে।

উৎপাদন মৌসুম: ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে যে কোন সময় করলার বীজ বোনা যেতে পারে। কেউ কেউ জানুয়ারী মাসেও বীজ বুনে থাকেন কিন্তু এ সময় তাপমাত্রা কম থাকায় গাছ দ্র্বত বাড়তে পারে না, ফলে আগাম ফসল উৎপাদনে তেমন সুবিধা হয় না।

বীজের হার: করলা ও উচ্ছের জন্য হেক্টর প্রতি যথাক্রমে ৬-৭.৫ও ৩-৩.৫ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়।

মালচিং পদ্ধতিতে করলা চাষ করে লাভবান

যেভাবে করলা চাষ করলে অধিক ফলন পাবেন
যেভাবে করলা চাষ করলে অধিক ফলন পাবেন

কুড়িগ্রামে রাজারহাটে এই প্রথম মালচিং পদ্ধতিতে চাষ করা হয়েছে করলা। ফলন ও সাইজ দেখে আশপাশের চাষীরা আগ্রহী হয়ে উঠেছে। বিষমুক্ত মালচিং পদ্ধতিতে করলা চাষ করে অধিক মুনাফা পাওয়ায় কৃষকের মুখে এখন হাসি। প্রাচীন পদ্ধতিতে অতিরিক্ত সার-কীটনাশক ছাড়াই স্বল্প খরচে অধিক উৎপাদন হওয়ায় সাড়া ফেলেছে এই চাষ পদ্ধতি। 

করলা চাষী বকুল মিয়া জানান, এই প্রথম এই পদ্ধতিতে করলা চাষ করলাম। মালচিং প্লাস্টিক ব্যবহার করে সবদিক দিয়ে লাভবান হয়েছি। মালচিং-এ একবারেই জমি তৈরী করে বীজ বপন করতে হয়। এতে বারবার সার, কীটনাশক ও পানি দিতে হয় না। পরিচর্চা না থাকায় শ্রমিকও লাগে না। ফলে জমির খরচ অর্ধেক কমে গেছে। এই পদ্ধতিতে দ্বিগুণ ফলন পেয়েছি।

রাজারহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুন্নাহার সাথী জানান, বর্তমানে বিশেষভাবে তৈরী পরিবেশবান্ধব প্লাস্টিক দিয়ে মালচিং পদ্ধতিতে কৃষককে করলা চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এতে অল্প খরচে কৃষক অধিক লাভবান হতে পারবেন। এছাড়াও অফ সিজনেও এর ব্যবহার করা হচ্ছে। আশা করছি এতে জেলায় সবজির ব্যাপক উৎপাদন হবে। এটি জেলার চাহিদা মিটিয়ে বাইরের জেলাতেও বিক্রি করা যাবে। 

যেভাবে করলা চাষ করলে অধিক ফলন পাবেন
যেভাবে করলা চাষ করলে অধিক ফলন পাবেন

জানা গেছে, রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের মীরের বাড়ী গ্রামের কৃষক মুকুল মিয়া এই প্রথম ১২শতক জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে করলা চাষ করেছেন। গত মার্চ মাসের চারা লাগিয়ে খরচ পরেছে মাত্র ১৩ হাজার টাকা। এর মধ্যে চারায় খরচ গেছে সাড়ে ৩হাজার টাকা, পলিথিন কিনে মালচিং করতে গেছে আড়াই হাজার টাকা এবং জাংলি, সেচ ও কীটনাশকসহ অন্যান্য বাবদ খরচ হয়েছে ৭ হাজার টাকা। দুই মাস পর এপ্রিলের শুরুতে করলা বিক্রি করা শুরু করেছেন। মে মাসের শেষ পযন্ত তিনি ৪১ হাজার টাকার করলা বিক্রি করেছেন। 

আরডিআরএস’র কৃষিবিদ সোহেল রানা জানান, আধুনীকরণ হওয়ার সাথে সাথে প্লাস্টিক মালচিং এর ব্যবহার জনপ্রিয় হচ্ছে। এটি আধুনিক চাষাবাদের একটি উন্নত পদ্ধতি। তাই পরিচর্চা ব্যয় কম। এটি সহজলভ্য ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় কৃষকরা সহজে এই চাষে ঝুঁকে পরবেন। পল্লী কর্ম সহায়ক কর্মসূচির অর্থায়নে আরডিআরএস বাংলাদেশ ও উপজেলা কৃষি অফিস যৌথভাবে মালচিং পদ্ধতিতে করলা চাষ শুরু করেছে। 

করলা নিয়মিত খাওয়া ক্যান্সার, চুল এবং ত্বকের সমস্যায় সাহায্য করে। উপরন্তু, এটি দক্ষতার সাথে রক্ত ​​সঞ্চালন বাড়ায়, যা সামগ্রিকভাবে ভাল স্বাস্থ্যের প্রচার করে। উন্নত শ্বাসযন্ত্রের স্বাস্থ্য: হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস এবং রাইনাইটিস সবই করলা দিয়ে চিকিত্সা করা যেতে পারে

যেসব কারণে করলা খাবেন

যেভাবে করলা চাষ করলে অধিক ফলন পাবেন
যেভাবে করলা চাষ করলে অধিক ফলন পাবেন
  • করলা উচ্চরক্তচাপ ও চর্বি কমায়। এতে থাকা ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বক ও চুল ভালো রাখে। বার্ধক্য ঠেকিয়ে তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে।
  • এটি ভাইরাস ও কৃমিনাশক হিসেবেও কাজ করে।
  • হিমোগ্লোবিন তৈরি করে রক্তের উপাদান বাড়াতে করলার জুড়ি মেলা ভার। রক্তশূন্যতায় ভুগছেন এমন
  • রোগীদের জন্য উত্তম পথ্য করলা।
  • করলার রস শক্তিবর্ধক হিসেবে কাজ করে। স্ট্যামিনা বাড়ানোর পাশাপাশি ভালো ঘুম হতেও সহায়তা করে।
  • করলা শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরকে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে।
  • করলায় রয়েছে রক্তে চিনি কমানোর উপাদান। ডায়াবেটিস রোগীরা রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত করলা খেতে পারেন।
  • পানির সঙ্গে মধু ও করলার রস মিশিয়ে খেলে অ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিস, শ্বাসরোগ ও গলার প্রদাহে উপকার পাওয়া যায়।
  • করলা হজমপ্রক্রিয়ার গতি বাড়ায়। কোষ্ঠকাঠিন্য ও পরিপাকতন্ত্রের জটিলতা কমাতে নিয়মিত করলা খেতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *