আজকের শীর্ষ সংবাদ

সূরা: বাকারা – (البقرة)

Spread the love

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ

সূরা বাকারা – (البقرة)

মাদানী, মোট আয়াতঃ ২৮৬

الٓـمّٓ ۚ

অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আলিফ-লাম-মীম ১

তাফসীরঃ

১. বিভিন্ন সূরার শুরুতে এ রকমের হরফ এভাবেই পৃথক-পৃথকরূপে নাযিল হয়েছিল। এগুলোকে আল-হুরূফুল মুকাত্তাআত (বিচ্ছিন্ন হরফসমূহ) বলে। এগুলোর অর্থ ও মর্ম সম্পর্কে সঠিক কথা এই যে, তা আল্লাহ তাআলা ছাড়া কারও জানা নেই। এটা আল্লাহ তাআলার কিতাবের এক নিগূঢ় রহস্য। এ নিয়ে গবেষণা ও অনুসন্ধানের কোনও প্রয়োজন নেই। কেননা এর অর্থ বোঝার উপর আকীদা ও আমলের কোনও মাসআলা নির্ভরশীল নয়।

ذٰلِکَ الۡکِتٰبُ لَا رَیۡبَ ۚۖۛ  فِیۡہِ ۚۛ  ہُدًی لِّلۡمُتَّقِیۡنَ ۙ

অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এটি এমন কিতাব, যার মধ্যে কোনও সন্দেহ নেই। ২ এটা হিদায়াত এমন ভীতি অবলম্বনকারীদের জন্য ৩

তাফসীরঃ

২. অর্থাৎ এ কিতাবের প্রতিটি কথা সন্দেহাতীতভাবে সত্য। মানব-রচিত কোনও গ্রন্থকে শত ভাগ সন্দেহমুক্ত বলে বিশ্বাস করা যায় না। কেননা মানুষ যত বড় জ্ঞানীই হোক তার জ্ঞানের একটা সীমা আছে। তাছাড়া তার রচনার ভিত্তি হয় তার ব্যক্তিগত ধারণা-ভাবনার উপর। কিন্তু এ কুরআন যেহেতু আল্লাহ তাআলার কিতাব, যার জ্ঞান সীমাহীন এবং শত ভাগ সন্দেহাতীত, তাই এতে কোনও রকম সংশয়-সন্দেহের অবকাশ নেই। যদি কারও মনে সন্দেহ দেখা দেয়, তবে তা তার বুঝের কমতির কারণেই দেখা দেবে, না হয় এ কিতাবের কোনও বিষয় সন্দেহপূর্ণ নয় আদৌ।

৩. যদিও কুরআন মাজীদ মুমিন-কাফির নির্বিশেষে সকলকেই সঠিক পথ দেখায় এবং এ হিসেবে কুরআনের হিদায়াত সকলের জন্যই অবারিত, কিন্তু ফলাফলের প্রতি লক্ষ্য করলে দেখা যায় কুরআনী হিদায়াত দ্বারা উপকার কেবল তারাই লাভ করতে পারে, যারা এর প্রতি বিশ্বাস রেখে এর সমস্ত বিধি-বিধান ও শিক্ষামালার অনুসরণ করে। এ কারণেই বলা হয়েছে, ‘এটা হিদায়াত এমন ভীতি অবলম্বনকারীদের জন্য, যারা অদৃষ্ট জিনিসসমূহে ঈমান আনে…’। ভীতি অবলম্বনের অর্থ হল অন্তরে সর্বদা এই চেতনা জাগ্রত রাখা যে, একদিন আল্লাহ তাআলার দরবারে আমাকে আমার সমস্ত কর্মের জবাবদিহী করতে হবে। কাজেই আমার এমন কোনও কাজ করা উচিত হবে না, যা তাঁর অসন্তুষ্টির কারণ হতে পারে। এই ভয় ও চেতনারই নাম তাকওয়া। অদৃশ্য ও নাদেখা জিনিসসমূহের জন্য কুরআন মাজীদ ‘গায়ব’ শব্দ ব্যবহার করেছে। এর দ্বারা এমন সব বিষয় বোঝানো উদ্দেশ্য, যা চোখে দেখা যায় না, হাতে ছোঁয়া যায় না এবং নাক দ্বারা শুঁকেও উপলব্ধি করা যায় না; বরং তা কেবলই আল্লাহ তাআলার ওহীর মাধ্যমে জানা সম্ভব। অর্থাৎ হয়ত কুরআন মাজীদের ভেতর তার উল্লেখ থাকবে অথবা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওহী মারফত জেনে আমাদেরকে তা অবহিত করবেন। যেমন আল্লাহ তাআলার গুণাবলী, জান্নাত ও জাহান্নামের অবস্থাদি, ফিরিশতা প্রভৃতি। এ স্থলে আল্লাহ তাআলার নেক বান্দাদের পরিচয় দেওয়া হয়েছে যে, তারা আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণীসমূহের প্রতি মনে-প্রাণে বিশ্বাস রেখে সেই সকল জিনিসকে সত্য বলে স্বীকার করে, যা তারা দেখেনি। এ দুনিয়া মূলত পরীক্ষার স্থান। সেই অদৃশ্য বিষয়াবলী যদি চোখে দেখা যেত, তারপর কেউ তাতে বিশ্বাস করত, তবে তা কোনও পরীক্ষা হত না। আল্লাহ তাআলা সেসব জিনিসকে মানুষের দৃষ্টির আড়ালে রেখেছেন, কিন্তু বাস্তবে যে তার অস্তিত্ব আছে, তার সম্পর্কে অসংখ্য দলীল-প্রমাণ সামনে রেখে দিয়েছেন। যে-কেউ ইনসাফের সাথে তাতে চিন্তা করবে, সে গায়বী বিষয়াবলীর প্রতি সহজেই ঈমান আনতে পারবে, ফলে পরীক্ষায় সে উত্তীর্ণ হবে। কুরআন মাজীদও সেসব প্রমাণ পেশ করেছে, যা ইনশাআল্লাহ একের পর এক আসতে থাকবে। প্রয়োজন কেবল কুরআন মাজীদকে সত্য-সন্ধানের প্রেরণায় নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে পড়া এবং অন্তরে এই চিন্তা রাখা যে, এটা হেলাফেলা করার মত কোনও বিষয় নয়। এটা মানুষের স্থায়ী জীবনের সফলতা ও ব্যর্থতার বিষয়। কাজেই অন্তরে এই ভয় জাগ্রত রাখা চাই যে, পাছে আমার কুপ্রবৃত্তি ও মনের খেয়াল-খুশী কুরআন মাজীদের দলীল-প্রমাণ যথাযথভাবে বোঝার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। তাই আমাকে কুরআন প্রদত্ত হিদায়াত ও পথ-নির্দেশকে সত্য-সন্ধানের প্রেরণা নিয়ে পড়তে হবে এবং আগে থেকে অন্তরে যেসব চিন্তা-চেতনা শিকড় গেড়ে আছে তা থেকে অন্তরকে মুক্ত করে পড়তে হবে, যাতে সত্যিকারের হিদায়াত আমি লাভ করতে পারি। ‘কুরআন যে ভীতি-অবলম্বনকারীদের জন্য হিদায়াত’ তার এক অর্থ এটাও।

الَّذِیۡنَ یُؤۡمِنُوۡنَ بِالۡغَیۡبِ وَیُقِیۡمُوۡنَ الصَّلٰوۃَ وَمِمَّا رَزَقۡنٰہُمۡ یُنۡفِقُوۡنَ ۙ

অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যারা অদৃশ্য জিনিসসমূহে ঈমান রাখে ৪ এবং সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যা-কিছু দিয়েছি, তা থেকে (আল্লাহর সন্তোষজনক কাজে) ব্যয় করে।

তাফসীরঃ

৪. যে সকল লোক কুরআন মাজীদের হিদায়াত ও পথ-নির্দেশ দ্বারা উপকৃত হয়, এ স্থলে তাদের গুরুত্বপূর্ণ গুণাবলী উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে সর্বপ্রথম গুণ তো এই যে, তারা গায়ব তথা অদৃশ্য বিষয়াবলীর উপর ঈমান রাখে, যার ব্যাখ্যা উপরে দেওয়া হয়েছে। ঈমান সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়ই এর অন্তর্ভুক্ত। এর সারমর্ম হল- আল্লাহ তাআলা যা-কিছু কুরআন মাজীদে বর্ণনা করেছেন কিংবা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীসে ইরশাদ করেছেন সে সবের প্রতি তারা ঈমান ও বিশ্বাস রাখে। দ্বিতীয় জিনিস বলা হয়েছে তারা সালাত কায়েম করে। কায়িক ইবাদতের মধ্যে এটা সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। তৃতীয় বিষয় হল নিজের অর্থ-সম্পদ থেকে আল্লাহ তাআলার পথে ব্যয় করা। যাকাত-সদকা সবই এর অন্তর্ভুক্ত। এটা আর্থিক ইবাদত।

وَالَّذِیۡنَ یُؤۡمِنُوۡنَ بِمَاۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡکَ وَمَاۤ اُنۡزِلَ مِنۡ قَبۡلِکَ ۚ  وَبِالۡاٰخِرَۃِ ہُمۡ یُوۡقِنُوۡنَ ؕ

অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং যারা ঈমান রাখে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তাতেও এবং আপনার পূর্বে যা অবতীর্ণ করা হয়েছে ৫ তাতেও এবং তারা আখিরাতে পরিপূর্ণ বিশ্বাস রাখে। ৬

তাফসীরঃ

৫. অর্থাৎ তারা বিশ্বাস রাখে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি যে ওহী অবতীর্ণ করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণরূপে সত্য এবং তাঁর পূর্ববর্তী আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম- হযরত মূসা (আ.) হযরত ঈসা (আ.) প্রমুখের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে, তাও সত্য ছিল, যদিও পরবর্তীকালের লোকেরা তা যথাযথভাবে সংরক্ষণ করেনি, বরং তাতে নানা রকম রদ-বদল ও বিকৃতি সাধন করেছে। এ আয়াতে সূক্ষ্মভাবে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, ওহী নাযিলের ক্রমধারা মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত পৌঁছে শেষ হয়ে গেছে। তাঁর পর এমন কোনও ব্যক্তির জন্ম হবে না, যার প্রতি ওহী নাযিল হবে কিংবা যাকে নবী বানানো হবে। কেননা আল্লাহ তাআলা এ স্থলে কেবল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি নাযিলকৃত ওহী এবং তাঁর পূর্ববর্তী আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামের প্রতি অবতীর্ণ ওহীর কথা উল্লেখ করেছেন। তাঁর পরের কোনও ওহীর কথা উল্লেখ করেননি। যদি তাঁর পরেও নতুন নবী আসার সম্ভাবনা থাকত, যার ওহীর প্রতি ঈমান আনা আবশ্যিক, তবে এ স্থলে তার কথাও উল্লেখ করা হত, যেমন পূর্ববর্তী নবীগণের থেকে প্রতিশ্রুতি নেওয়া হয়েছিল যে, আপনাদের পর যে শেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শুভাগমন হবে, আপনাদের কিন্তু তাঁর প্রতিও ঈমান আনতে হবে (আল-ইমরান ৩ : ৮১ আয়াত)।

৬. ‘আখিরাত’ বলতে সেই জীবনকে বোঝানো হয়েছে, যা মৃত্যুর পর আসবে, যা স্থায়ী হবে, যখন প্রত্যেক বান্দাকে তার দুনিয়ার জীবনে কৃত যাবতীয় কর্মের হিসাব দিতে হবে এবং তার ভিত্তিতেই সে জান্নাতে যাবে না জাহান্নামে, তার ফায়সালা হবে। প্রথমে যে সকল অদৃশ্য বিষয়ের প্রতি ঈমান আনার কথা বলা হয়েছে, আখিরাত যদিও তার অন্তর্ভুক্ত, তথাপি পরিশেষে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে পৃথকভাবে তার উল্লেখ করা হয়েছে। সম্ভবত এর কারণ এই যে, প্রকৃতপক্ষে আখিরাতের বিশ্বাসই মানুষের চিন্তা-চেতনা ও কর্মজীবনকে সঠিক পথে পরিচালিত করে। যে ব্যক্তি বিশ্বাস করে, একদিন আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে আমাকে প্রতিটি কর্মের হিসাব দিতে হবে, সে কখনও আগ্রহের সাথে কোনও গুনাহের কাজে প্রস্তুত হতে পারে না।

اُولٰٓئِکَ عَلٰی ہُدًی مِّنۡ رَّبِّہِمۡ ٭ وَاُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ

অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এরাই এমন লোক, যারা তাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে সঠিক পথের উপর আছে এবং এরাই এমন লোক, যারা সফলতা লাভকারী।

اِنَّ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا سَوَآءٌ عَلَیۡہِمۡ ءَاَنۡذَرۡتَہُمۡ اَمۡ لَمۡ تُنۡذِرۡہُمۡ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ

অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

নিশ্চয়ই যে সকল লোক কুফর অবলম্বন করেছে, ৭ তাদেরকে আপনি ভয় দেখান বা নাই দেখান ৮ উভয়টাই তাদের পক্ষে সমান। তারা ঈমান আনবে না।

তাফসীরঃ

৭. একদল কাফের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে নিয়েছিল যে, যত স্পষ্ট দলীল ও উজ্জ্বল নিদর্শনই তাদের সামনে উপস্থিত করা হোক, তারা কখনোই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াতে ঈমান আনবে না। এখানে সেই কাফেরদের কথাই বলা হচ্ছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযি.) এ আয়াতের তাফসীরে বলেন, এরা হচ্ছে সেই সব লোক, যারা কুফরের উপর গোঁ ধরে বসে আছে। সেই ভাব ব্যক্ত করার লক্ষ্যেই তরজমায় ‘কুফর অবলম্বন করেছে’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।

৮. اِنْذَارْ -এর অর্থ করা হয়েছে ‘ভয় দেখানো’। কুরআন মাজীদে আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামের দাওয়াতকে প্রায়শ ‘ভীতি প্রদর্শন’ শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে। কেননা নবীগণ মানুষকে কুফর ও দুষ্কর্মের অশুভ পরিণাম সম্পর্কে ভয় দেখাতেন। সুতরাং আয়াতের মর্ম দাঁড়ায় এই যে, আপনি তাদেরকে দাওয়াত দেন বা নাই দেন, তাদের সামনে দলীল-প্রমাণ ও নিদর্শনাবলী পেশ করুন বা নাই করুন, তারা যেহেতু কোনও কথাই মানবে না বলে স্থির করে নিয়েছে, তাই তারা ঈমান আনবে না।

خَتَمَ اللّٰہُ عَلٰی قُلُوۡبِہِمۡ وَعَلٰی سَمۡعِہِمۡ ؕ  وَعَلٰۤی اَبۡصَارِہِمۡ غِشَاوَۃٌ ۫  وَّلَہُمۡ عَذَابٌ عَظِیۡمٌ ٪

অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আল্লাহ তাদের অন্তরে ও তাদের কানে মোহর করে দিয়েছেন, ৯ আর তাদের চোখের উপর পর্দা পড়ে আছে এবং তাদের জন্য রয়েছে ভয়ানক শাস্তি।

তাফসীরঃ

৯. এ আয়াতে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, জিদ ও হঠকারিতা অত্যন্ত বিপজ্জনক জিনিস। কোনও ব্যক্তি যদি ভুলে, অসাবধানতায় বা এ রকম কোনও কারণে কোনও গলত কাজ করে, তবে তার সংশোধনের আশা থাকে, কিন্তু যে ব্যক্তি কোনও ভুল কাজে জিদ ধরে এবং সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় যে, কোনও অবস্থাতেই সে তা ছাড়বে না ও সঠিকটা গ্রহণ করবে না, তবে তার সে জিদের পরিণতিতে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে তার অন্তরে মোহর করে দেওয়া হয়। ফলে তার সত্য কবুলের যোগ্যতাই খতম হয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এ অবস্থা থেকে রক্ষা করুন। এই ধারণা করার কোনও সুযোগ নেই যে, আল্লাহ তাআলা স্বয়ং যখন তার অন্তরে মোহর করে দিয়েছেন তখন তো সে মাযূর ও অপারগ। কেননা এ মোহর করাটা স্বয়ং তার জিদেরই পরিণতি এবং সত্য না মানার যে সিদ্ধান্ত সে করে নিয়েছে তারই ফল।

وَمِنَ النَّاسِ مَنۡ یَّقُوۡلُ اٰمَنَّا بِاللّٰہِ وَبِالۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ وَمَا ہُمۡ بِمُؤۡمِنِیۡنَ ۘ

অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

কিছু লোক এমন আছে, যারা বলে, আমরা আল্লাহ ও শেষ দিবসে ঈমান এনেছি, অথচ (প্রকৃতপক্ষে) তারা মুমিন নয়। ১০

তাফসীরঃ

১০. সূরার শুরুতে পাঁচটি আয়াতে মুমিনদের গুণাবলী ও তাদের শুভ পরিণামের কথা বর্ণিত হয়েছে। তারপর দুই আয়াতে যারা প্রকাশ্য কাফের তাদের সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে। এবার এখান থেকে তৃতীয় একটি শ্রেণীর অবস্থা তুলে ধরা হচ্ছে, যাদেরকে ‘মুনাফিক’ বলা হয়। এরা প্রকাশ্যে তো নিজেদেরকে ‘মুসলিম’ বলে দাবী করত, কিন্তু আন্তরিকভাবে তারা ইসলাম গ্রহণ করেনি। ২০ নং আয়াত পর্যন্ত দীর্ঘ তেরটি আয়াতের আলোচনা কেবল তাদেরই সম্পর্কে।

یُخٰدِعُوۡنَ اللّٰہَ وَالَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا ۚ  وَمَا یَخۡدَعُوۡنَ اِلَّاۤ اَنۡفُسَہُمۡ وَمَا یَشۡعُرُوۡنَ ؕ

অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা আল্লাহকে এবং যারা (বাস্তবিক) ঈমান এনেছে তাদেরকে ধোঁকা দেয় এবং (সত্য কথা এই যে,) তারা নিজেদের ছাড়া অন্য কাউকে ধোঁকা দেয় না। কিন্তু (এ বিষয়ের) কোনও উপলব্ধি তাদের নেই। ১১

তাফসীরঃ

১১. অর্থাৎ আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় তারা আল্লাহ ও মুসলিমদেরকে ধোঁকা দিতে চায়, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা নিজেরা নিজেদেরকেই ধোঁকা দিচ্ছে। কেননা এ ধোঁকার পরিণাম তাদের নিজেদের পক্ষেই অশুভ হবে। তারা মনে করছে, নিজেদেরকে মুসলিমরূপে পরিচয় দিয়ে তারা কুফরের পার্থিব পরিণতি থেকে রক্ষা পেয়ে গেছে, অথচ আখিরাতে তাদের যে আযাব হবে তা দুনিয়ার আযাব অপেক্ষা কঠিনতর।

فِیۡ قُلُوۡبِہِمۡ مَّرَضٌ ۙ فَزَادَہُمُ اللّٰہُ مَرَضًا ۚ وَلَہُمۡ عَذَابٌ اَلِیۡمٌۢ ۬ۙ بِمَا کَانُوۡا یَکۡذِبُوۡنَ

অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তাদের অন্তরে আছে রোগ। আল্লাহ তাদের রোগ আরও বৃদ্ধি করে দিয়েছেন। ১২ আর তাদের জন্য যন্ত্রণাময় শাস্তি প্রস্তুত রয়েছে, যেহেতু তারা মিথ্যা বলত।

তাফসীরঃ

১২. পূর্বে ৭নং আয়াতে যা বলা হয়েছিল, এটাও সে রকমেরই কথা। অর্থাৎ প্রথম দিকে এ পথভ্রষ্টতাকে তারা স্বেচ্ছায় গ্রহণ করে নিয়েছিল এবং তাতে স্থিরসংকল্প হয়ে গিয়েছিল। এটা ছিল তাদের অন্তরের একটা ব্যাধি। অতঃপর তাদের জেদের পরিণামে আল্লাহ তাআলা তাদের ব্যাধি আরও বৃদ্ধি করে দেন। ফলে বাস্তবিকভাবে তাদের ঈমান আনার তাওফীক হবে না।

সংগ্রহীত: আল কুরআন

সংগ্রহন কারী: হাঃ কারীঃ সুফিয়ান সাওরী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *