জাবির বলেন-
‘সিরাতল মুসতাকিমের অর্থ হলো ইসলাম, যা আকাশ-পৃথিবী ও এর মাঝে যা কিছু আছে-সবকিছুর চেয়ে প্রশস্ত!’
অর্থাৎ ইসলামি শরিয়াহ যে পদ্ধতিতে মানুষের জীবন পরিচালনা করতে বলে, সেটাই সিরাতল মুসতাকিমের পথ। আল্লাহ তায়ালা নিজেই সিরাতল মুসতাকিমের চমৎকার একটি উদাহরণ দিয়েছেন-যা রাসূল বর্ণনা করেছেন।
‘সিরাতল মুসতাকিম এমন একটি পথ, যার দুই দিকে দুটি প্রাচীর রয়েছে। সেই প্রাচীরের মাঝে কয়েকটি খোলা দরজা আছে। প্রতিটি দরজার ওপরই পর্দা টাঙানো আছে। সিরাতল মুসতাকিমের প্রবেশদ্বারে সার্বক্ষণিকের জন্য একজন আহ্বানকারী নিযুক্ত করা আছে। সে সর্বদা আহ্বান করে বলছে-“হে মানবসকল! তোমরা এই সোজা পথ ধরে চলো; আঁকাবাঁকা পথে যেয়ো না।” আবার অন্য পথগুলোর ওপরেও পাহারাদার আছে। কেউ সেখানে প্রবেশ করতে চাইলে তারা সতর্ক করে বলে-“সাবধান! এটা খোলো না। যদি খোলো, তবে মূল পথ থেকে ছিটকে পড়বে।” সিরাতল মুসতাকিম হলো ইসলাম, আর প্রাচীরগুলো হলো আল্লাহর নিষিদ্ধ বিষয়। প্রবেশদ্বারে আহ্বানকারী হচ্ছে কুরআন এবং রাস্তার ওপর আহ্বানকারী হলো তাকওয়া বা আল্লাহর ভয়-যা প্রত্যেক বান্দার অন্তরে আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে।’ (মুসনাদে আহমাদ)
ইবনে জারির (রহ.) আরেকটু সহজ করে বলেন-
‘যে পথে চললে আল্লাহ তাঁর বান্দার ওপর সন্তুষ্ট হন এবং পুরস্কৃত করেন, সেটাই সিরাতল মুসতাকিমের পথ।’
আল্লাহ তায়ালা নিজেও সূরা ইয়াসিনে এ ব্যাপারটি স্পষ্ট করে বলেছেন-
وَأَنِ اعْبُدُونِي هَذَا صِرَاطٌ مُسْتَقِيمٌ –
‘এবং আমারই দাসত্ব করো-এটিই সরল-সঠিক পথ।’ (সূরা ইয়াসিন: ৬১)
‘আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-একদিন নবিজি (মাটিতে) একটি রেখা টানলেন। এরপর বললেন-“এটা হলো আল্লাহর রাস্তা।” এরপর তিনি আবার ডানপাশে ও বামপাশে কয়েকটি রেখা টানলেন। অতঃপর বললেন-“এ রাস্তাগুলোর প্রত্যেকটি রাস্তায় একজন শয়তান বসে মানুষকে আহ্বান করছে।” এরপর তিনি এই আয়াত তিলাওয়াত করেন- “নিশ্চয় এটাই আমার সরল পথ; তোমরা সে পথের অনুসরণ করো।”” (সুনানে নাসায়ি: ১১১৭৪, মুসনাদে আহমদ: ৪১৪২)
মুজাহিদ (রহ.) এটাকে আরেকটু ব্যাপকার্থে বলেন- ‘সিরাতল মুসতাকিমের অর্থ হলো-হক বা সত্যের পথ।’
সুতরাং সর্বদা আমাদের হকের পথে থাকার জন্য দুআ করতে হবে এবং চেষ্টাও করতে হবে। কারণ, এই পথই হলো মুহাম্মাদ, খোলাফায়ে রাশেদিন, সাহাবায়ে কেরাম ও সালিহিন বান্দাদের পথ। এটাই ‘সিরাতল মুসতাকিম’।
কোন সিরাত বা পথকে সিরাতল মুস্তাকিম বলা হয়? এর ব্যাখ্যা পরের আয়াতে
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নিজেই দিয়েছেন-
صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ
‘তাদের পথ-যাদের তুমি অনুগ্রহ করেছ। তাদের পথ নয়-যারা গজবপ্রাপ্ত ও বিপথগামী।’
এই অনুগ্রহপ্রাপ্তরা চার শ্রেণিভুক্ত-
১. নবি: তাঁদের কাছে ওহি আসত, তাঁরা ধরার বুকে আল্লাহর বার্তাবাহক, তাঁরা সবাই মাসুম বা নিষ্পাপ।
২. সিদ্দিকিন: তাঁরা সত্যের ব্যাপারে আপসহীন, তাঁদের নেতা আবু বকর আস-সিদ্দিক।
৩. শুহাদা: যারা আল্লাহর জমিনে তাঁর দ্বীনকে বাস্তবায়ন করার জন্য শহিদ হয়েছেন। তাঁদের নেতা হলেন হামজা।
৪. সালেহিন: নেক আমলকারী ব্যক্তিবর্গ।
আমরা ক্রোধের পাত্র ও পথভ্রষ্ট সম্প্রদায় থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাই। সকল মুফাসসিরে কেরামদের মত হলো-‘ক্রোধের পাত্র ও পথভ্রষ্ট সম্প্রদায়’