আজকের শীর্ষ সংবাদ

সূরা ফাতিহার বিশেষণ পর্ব ৩

সূরা ফাতিহার বিশেষণ পর্ব ৩
Spread the love

সূরা ফাতিহার প্রথম তিনটি আয়াতে আমরা আল্লাহর শেখানো ভাষায় আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা করি-

‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি জগৎসমূহের রব। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু। বিচার দিনের মালিক।’

চতুর্থ নম্বর আয়াতে আমরা আল্লাহর সাথে আমাদের সম্পর্ক বর্ণনা করি-

‘আমরা কেবল তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই সাহায্য চাই।’

এরপর শেষ তিন আয়াতে বিনয়ের সাথে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা পেশ করি।

‘আমাদের সঠিক পথে পরিচালিত করো। তাদের পথ-যাদের প্রতি তুমি অনুগ্রহ করেছ। তাদের পথ নয়, যারা গজবপ্রাপ্ত ও বিপথগামী।’

প্রথম আয়াতে আমরা বললাম-

الْحَمْدُ لِلَّهِ –

‘সকল প্রশংসা আল্লাহর।’

আরবিতে ‘হামদুন’ অর্থ প্রশংসা। আর এর সাথে যখন ‘আল’ যুক্ত করা হয়, তখন হয় আলহামদু, যার অর্থ-সব ধরনের প্রশংসা। যত ধরনের প্রশংসা হতে পারে, তার একচ্ছত্র অধিপতি হচ্ছেন মহান আল্লাহ তায়ালা। অনাদিকাল থেকে শুরু করে অনন্তকাল পর্যন্ত সমস্ত প্রশংসার একমাত্র মালিক তিনি। এই পৃথিবীতে আল্লাহর সবচেয়ে বেশি প্রশংসা করেছেন বিশ্বনবি মুহাম্মাদ। আবার তিনি নিজেও প্রশংসিত। কুরআনে বর্ণিত নবিজির দুটো নাম; একটি নাম হলো মুহাম্মাদ (যিনি প্রশংসিত), আরেকটা নাম আহমাদ (যিনি অধিক প্রশংসা করেন)।

কিয়ামতের দিন বিশ্বনবি সকল আদম সন্তানের নেতা হবেন। তাঁর হাতে একটি পতাকা থাকবে-যার নাম ‘লিওয়াউল হামদ’। সেই পতাকাটি হবে হামদ বা প্রশংসার পতাকা। (জামে আত-তিরমিজি: ৩১৪৮)

এভাবেই বিশ্বনবি দুনিয়া ও আখিরাত-দুই জাহানেই আল্লাহ তায়ালার সর্বাধিক প্রশংসার নমুনা স্থাপন করে দেখাবেন।

একদিন বিশ্বনবি মসজিদে নববিতে নামাজ পড়ছেন। কিরাত শেষে রুকুতে গেলেন, রুকু থেকে দাঁড়িয়ে পড়লেন- ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’। তখন একজন সাহাবি কর্তৃক উচ্চারিত হলো-

رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ حَمْدًا كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيهِ

‘হে পরওয়ারদিগার! সকল পবিত্রতম অগণিত কল্যাণময় প্রশংসা আপনার জন্য নির্ধারিত।’

এই বাক্যটি বিশ্বনবি কাউকে শিখিয়ে দেননি। তাই নামাজ শেষে তিনি জিজ্ঞেস করলেন-‘এই নতুন বাক্যটি কে পড়েছে?’ কেউ কোনো সাড়া দিলো না। বিশ্বনবি তখন সকলকে অভয় দিয়ে বললেন-‘যে এগুলো পড়েছ, সে খারাপ কিছু পড়োনি।’ তখন একজন সাহাবি বললেন- ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! এগুলো আমি পড়েছি।’ এটা শুনে বিশ্বনবি বললেন-‘আমি দেখলাম, ৩০ জনেরও অধিক ফেরেশতা প্রতিযোগিতা করছিল, ওই প্রশংসাসূচক কথাগুলো কে কার আগে আল্লাহর কাছে নিয়ে যাবে-সেটা নিয়ে।’ (সহিহ বুখারি: ৭৯৯)

এজন্য আমাদের উচিত মনঃপ্রাণ উজাড় করে বেশি বেশি আল্লাহর প্রশংসা করা। আর প্রশংসা করবই না-বা কেন? তিনি কত মহান! কী অপরূপ তাঁর সৃষ্টি! সমস্ত সাগরের পানিকে যদি কালি করা হয়, আর সমস্ত গাছকে যদি কলম বানানো হয়, অতঃপর সে সাগরের পানি নামক কালি দিয়ে আর গাছ নামক কলম দিয়ে যদি আল্লাহর প্রশংসাবাণী লেখা হয়, তাহলে সাগরের সব পানি ফুরিয়ে যাবে, গাছের কলম শেষ হয়ে যাবে, তবুও তাঁর মহিমা বর্ণনা শেষ হবে না। পৃথিবীতে আল্লাহ তায়ালা কত সাগর আর মহাসাগর সৃষ্টি করেছেন। প্রশান্ত মহাসাগর, আটলান্টিক মহাসাগর, উত্তর মহাসাগর, দক্ষিণ মহাসাগর, লোহিত সাগর, ভূমধ্যসাগর, চায়না সাগর, কৃষ্ণ সাগর, এ দেশের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর-এভাবে আরও কত সাগর। পৃথিবীর প্রায় তিন ভাগের দুই ভাগই জল আর এক ভাগ স্থল। তাহলে সবগুলো সাগর-মহাসাগর জুড়ে কী পরিমাণ পানির অস্তিত্ব বিদ্যমান? আপনি কল্পনা করতে পারেন (Could you imagine that)?

আর গাছপালা? এক অ্যামাজান জঙ্গলে কত গাছপালা আছে-তা কি গুণে শেষ করা যাবে? এত দূর না গিয়ে আমাদের সুন্দরবন নিয়েই যদি একটু কল্পনা করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *