শীতপ্রধান দেশে যেসব প্রাণী বসবাস করে, তাদের গায়ের চামড়া ও পশম আর গ্রীষ্মপ্রধান দেশে যেসব প্রাণী বসবাস করে, তাদের চামড়া ও পশম এক রকম নয়। স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোতে যেসব শ্বেত ভাল্লুক বা উট দেখতে পাওয়া যায়, সেগুলোর গায়ে মোটা পশমের আবরণ থাকে। তারাও কিন্তু সেটা চায়নি। মহান আল্লাহ চাওয়ার আগেই তাদের এগুলো দিয়েছেন। কিন্তু উষ্ণ দেশগুলোর প্রাণীদের গায়ে সেটা থাকে না। কারণ, তাদের এটা দরকার নেই। অর্থাৎ যেখানে যতটুকু দরকার, সেখানে তিনি ঠিক ততটুকুই দিয়েছেন। তাই তো তিনি আমাদের রব।
এ মহাবিশ্বে যত জগৎ আছে, তিনি সকল জগতের রব। পানির নিচে যত প্রাণী আছে, যত উদ্ভিদ আছে, সবকিছুর রব তিনি। আকাশের ওপর যা যা আছে, সবকিছুর রব তিনি। আমাদের দৃষ্টিতে যা ধরা পড়ে এবং যা দৃষ্টিসীমার বাইরে অবস্থান করছে, সবকিছুর ওপরই একক আধিপত্য আল্লাহর। আমরা এই বলে তাঁর রুবুবিয়্যাতের ঘোষণা দিই – الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ – ‘সমস্ত প্রশংসা জগৎসমূহের রবের জন্য।’
পরের আয়াতে তায়ালা আল্লাহ বলেন-
الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ –
‘পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু।’
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এখানে দুটি সিফাত (গুণবাচক নাম) উল্লেখ করেছেন; রহমান ও রহিম। বাংলাতে আমরা শব্দ দুটোর অর্থ করি-দয়াময় ও অসীম দয়ালু। তিনি যে কত বড়ো দয়ালু আর মেহেরবান, তা আমাদের কল্পনাকেও হার মানাবে। মা-বাবা আমার প্রতি যতটা না মেহেরবান, আল্লাহ আমার প্রতি তার চেয়েও অধিক মেহেরবান। এমনকী আমি নিজে আমার প্রতি যতটা না মেহেরবান, তিনি আমার প্রতি তার চেয়েও বেশি মেহেরবান। জীবনে কত বেশি গুনাহ আপনি করেছেন, সেটা ধর্তব্য না; যে মুহূর্তে খাস দিলে তওবা করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করবেন, অশ্রুসিক্ত নয়নে অনুতপ্ত হবেন, সাথে সাথে তাঁর দয়া ও রহমত আপনাকে ঘিরে ধরবে। তাঁর ক্ষমা লাভে আপনি ধন্য হবেন।
রাসূল ইরশাদ করেন-
‘আল্লাহ তায়ালা রহমত বা দয়াকে একশত ভাগ করছেন, অতঃপর নিরানব্বই ভাগ দয়া নিজের কাছে রেখেছেন, আর মাত্র একভাগ দয়া গোটা বিশ্বের সবার মাঝে ঢেলে দিয়েছেন।’
‘আর-রহমান’ শব্দের অর্থ-তিনি সকল সৃষ্টির প্রতি দয়াবান; এমনকী অমুসলিমদের প্রতিও তিনি অব্যাহতভাবে দয়া প্রদর্শন করেন। তবে ‘আর-রহিম’ শব্দটি কেবল ঈমানদারদের জন্য খাস। আল্লাহ তায়ালা ‘আর-রহিম’ হয়ে ঈমানদারদের এই দুনিয়ায় ও আখিরাতে দয়া প্রদর্শন করবেন।
এই পৃথিবীর সর্বত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অবারিত রহমত বিস্তৃত। এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে আল্লাহর রহমত নেই। তিনি ইরশাদ করেন-
وَرَحْمَتِي وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍ –
‘আমার দয়া সর্বত্র বিস্তৃত।’ (সূরা আ’রাফ: ১৫৬)
আমরা যতই পাপ করি না কেন, আল্লাহর দয়া তার চেয়ে অনেকগুণ বেশি। আমাদের পাপ যদি হয় খালের কিংবা বিলের পানির সমান, তাহলে আল্লাহর দয়া সাগরের পানির চেয়েও বেশি। আমাদের পাপ যদি হয় পাহাড়সম, তাহলে আল্লাহর দয়া আকাশের চেয়েও উঁচু। আমাদের কৃত পাপ যত বিশালই হোক না কেন, মহান আল্লাহর অসীম দয়ার তুলনায় তা একেবারই নগণ্য। মানুষের প্রতি মহান আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ অফুরন্ত। তাঁর দয়া বা অনুগ্রহে হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা কারও নেই। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ইরশাদ করছেন-
مَا يَفْتَحِ اللَّهُ لِلنَّاسِ مِنْ رَّحْمَةٍ فَلَا مُمْسِكَ لَهَا ۚ وَمَا يُمْسِكُ فَلَا
مُرْسِلَ لَهُ مِنْ بَعْدِهِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ –
‘মানুষের প্রতি আল্লাহ কোনো করুণা করলে কেউ তা নিবারণ করার (ফেরানোর) নেই। আর তিনি যা নিবারণ করেন, তিনি ছাড়া অন্য কেউ তার প্রেরণকারী নেই। আর তিনি মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (সূরা ফাতির : ০২)
আমরা সবাই পাপী। আমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যিনি পাপ করেননি। প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে, ছোটো কিংবা বড়ো, সগিরা কিংবা কবিরা,