আজকের শীর্ষ সংবাদ

যাদের সাথে বিবাহ হারাম

Spread the love

বিশ্ব জাহানের খালিক ও মালিক মহান রাব্বুল আলামিন এ পৃথিবীকে আবাদ করার জন্য অজস্র প্রানীকুল ও জড় পদার্থ সৃষ্টি করেছেন। মানব জীবনের সুষ্ঠু পরিচালনায় মানুষ অন্যান্য জীব জানোয়ার ও জড় পদার্থের প্রতি মুখাপেক্ষী। পাশাপাশি মানুষেরাও পরস্পর একে অন্যের প্রতি মুখাপেক্ষী। সভ্য, ভদ্র ও খোদাভীরু ও সুশীল সমাজ বিনির্মানে আল্লাহ তায়ালা সকল মানুষকে একে অন্যের সাথে বিভিন্ন সম্বন্ধের সুতোয় গেঁথে দিয়েছেন। আর এই সম্বন্ধের ভিত্তিতেই একে অপরের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের অনুভূতি অর্জন করে। মানব সমাজের এই সম্বন্ধের ভিন্নতা, দায়িত্ব ও কর্তব্যের বিভাজন গোটা মানব জাতিকে সারাক্ষণ কর্মব্যস্ত করে রেখেছে। যার ফলে বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ সুসংগঠিতভাবে সমাজবদ্ধ সুষ্ঠু ও সুন্দর জীবন যাপনের সুযোগ লাভ করছে।

যাদের সাথে বিবাহ হারাম
যাদের সাথে বিবাহ হারাম

সমাজের শান্তি শৃংখলা বজায় রাখতে আত্মীয়তার সম্বন্ধ রক্ষার ব্যাপারে ইসলাম গুরুত্বারুপ করত: সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছে একের প্রতি অন্যের অধিকার আদায়ের নির্দেশনা।

মানব সমাজে বিদ্যমান সম্বন্ধগুলোর কতেক এমন রয়েছে, যা পরস্পরে স্নেহ-মমতার দাবী রাখে, আবার কয়েকটি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শনের দাবী রাখে। স্নেহ-মমতা, সম্মান ও মর্যাদা এবং স্বাস্থ্যগত দিকটিকে বিবেচনা করত: বৈবাহিক সম্বন্ধের ক্ষেত্রে কাকে বিয়ে করা যাবে আর কাকে বিয়ে করা যাবে না, এ সম্পর্কে মহান রাব্বুল আলামীন মহাগ্রন্থ আল কুরআনে সূরাতুন নিসার ২৩নং আয়াতে ইরশাদ করেন: “তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে: তোমাদের মাতা, কন্যা, বোন, ফুফু, খালা, ভাতিজী, ভাগিনি, তোমাদের সেই মা যারা তোমাদের দুধ পান করিয়েছে, তোমাদের দুধবোন, তোমাদের স্ত্রীদের মা, এবং তোমাদের স্ত্রীদের কন্যা যারা তোমাদের প্রতিপালনে আছে (এবং যারা) তোমাদের এমন স্ত্রীদের গর্ভজাত, যাদের সাথে তোমরা সহবাস করেছ। আর যদি তাদের সাথে সহবাস না করে থাক তবে (তাদের ■ কন্যাদের বিয়ে করায়) তোমাদের কোন গোনাহ নেই। এবং হারাম করা হয়েছে তোমাদের ঐ পুত্রদের স্ত্রী, যারা তোমাদের ঔরষজাত এবং দুইবোনকে একত্র করা, তবে অতীতে যা হয়ে গেছে (তা মাফ)। নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা অত্যান্ত ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।
আলোচ্য আয়াতে যাদের সাথে বিবাহ হারাম এমন নারীদের বিবরণ দেওয়া হয়েছে। কোন কোন হারামনারী কোন অবস্থাতেই হালাল হয় না বরং চিরতরে হারাম। কোন কোন নারী চিরতরে হারাম নয়, কোন কোন অবস্থায় তারা হালাল ও হয়ে যায় ।

প্রথমমোক্ত ৩ প্রকার
(১) বংশগত হারামনারী
(২) দুধের কারণে হারামনারী ও
(৩) শ্বশুর সম্পর্কের কারণে চিরতরে হারাম নারী।
শেষোক্ত এক প্রকার অর্থাৎ পরস্ত্রী যতক্ষণ পর্যন্ত পরের স্ত্রী থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত হারাম।
যে চৌদ্দজনের সাথে বিয়ে হারাম এর বিস্তারিত বিবরণ:
অর্থাৎ আপন জননীদেরকে বিয়ে করা তোমাদের উপর হারাম করে দেওয়া হয়েছে। امهنكم শব্দের ব্যাপকতায় দাদী, নানী সবই এর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

شکم অর্থাৎ স্বীয় ঔরসজাত কন্যাকে বিয়ে করা হারাম, কন্যার কন্যাকে এবং পুত্রের কন্যাকেও বিয়ে করা হারাম।

মোটকথা কন্যা, পৌত্রি, প্রপৌত্রি, দৌহিত্রী, প্রদৌহিত্রী এদের সবাইকে বিয়ে করা হারাম এবং যে পুত্র-কন্যা ঔরসজাত নয়, বরং পালিত তাদের এবং তাদের সন্তানকে বিয়ে করা জায়েয। যদি অন্য কোন পথে অবৈধতা না থাকে। এমনিভাবে ব্যভিচারের মাধ্যমে যে কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহণ করে সেও কন্যারই পর্যায়ভূক্ত। তাদের বিয়ে করা দুরস্ত নয়।

واخواتكم অর্থাৎ সহোদরা বোনকে বিয়ে করা হারাম। এমনিভাবে বৈমাত্রেয়া ও বৈপিত্রিয়া বোনকেও বিয়ে করা হারাম। عمتكم অর্থাৎ পিতার সহোদরা, বৈমাত্রেয়া ও বৈপিত্রিয়া বোন কে বিয়ে করা হারাম। তিন প্রকার ফুফুকে বিয়ে করা যায় না। আপন জননীর তিন প্রকার বোন, প্রত্যেকের সাথেই বিয়ে করা হারাম।
ভ্রাতুস্পুত্রীর সাথেও বিয়ে হারাম, আপন হোক, বৈমাত্রিয় হোক বিয়ে হালাল নয়। বোনের কন্যা তথা ভাগ্নীকে বিয়ে করাও হারাম। – এখানেও বোনকে ব্যাপক অর্থে বুঝতে হবে। যেসব নারীর স্তন্য পান করা হয়; তারা জননী না হলেও বিবাহ হারাম হওয়ার ব্যাপারে জননীর পর্যায়ভুক্ত এবং তাদের সাথে বিয়ে হারাম। অল্প দুধ পান করুক কিংবা বেশী করুক, একবার পান করুক কিংবা একাধিকবার, সর্বাবস্থায় তারা হারাম হয়ে যাবে। ফেকাহবিদদের পরিভাষায় একে হুরমতেরাযাআত বলা হয়। তবে এতটুকু স্বরণ রাখা জরুরী যে, শিশু অবস্থায় দুধ পানের সময়ে দুধ পান করলেই এই হুরমতে রাযাআত কার্যকারী হয়। রাসূল সা. বলেন অর্থাৎ দুধ পানের কারনে যে অবৈধতা প্রমানিত হয়, তা সে সময়ে দুধ পান করলেই হবে, যে সময় দুধ পান করে শিশু শারীরিক দিক দিয়ে বর্ধিত হয়। (বোখারী, মুসলিম শরীফ)

অর্থাৎ দুধ পানের সাথে সম্পর্কিত যেসব বোন আছে, তাদেরকে বিয়ে করা হারাম, এর বিশদ বিবরন এই যে, দুধ পানের নির্দিষ্ট সময়কালে কোন বালক অথবা বালিকা কোন স্ত্রীলোকদের দুধ পান করলে সে তাদের মা এবং তার স্বামী তাদের পিতা হয়ে যায়। এছাড়া সে স্ত্রী লোকের আপন পুত্র-কন্যা তাদেরই ভাই-বোন হয়ে যায়। অনুরোপ সে স্ত্রীলোকের বোন তাদের খালা হয় এবং সে স্ত্রী লোকদের জ্যোষ্ঠ দেবররা তাদের চাচা হয়। তার স্বামীর বোনেরা শিশুদের ফুফু হয়ে যায় । দুধ পানের কারণে তাদের সবার পরস্পরে বৈবাহিক অবৈধতা স্থাপিত হয়ে যায়। বংশগত সম্পর্কের কারণে পরস্পরে যেসব বিয়ে হারাম হয়, দুধ পানের সম্পর্কের কারণে সে সব সম্পর্কীয়দের সাথে বিয়ে হারাম হয়ে যায়।

হাদীস শরীফে রাসূল সা. ইরশাদ ফরমান “একটি ছেলেশিশু ও একটি মেয়েশিশু কোন মহিলার দুধ পান করলে তাদের পরস্পরের মধ্যে বিয়ে হতে পারে না। এমনিভাবে দুধভাইও বোনের কন্যার সাথেও বিয়ে হতে পারে না”।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *