আজকের শীর্ষ সংবাদ

সূরা ফাতিহার বিশেষণ পর্ব ৬

সূরা ফাতিহার বিশেষণ পর্ব ৬
Spread the love

রাসূল ইরশাদ করেন-

‘আল্লাহ তায়ালা রহমত বা দয়াকে একশত ভাগ করছেন, অতঃপর নিরানব্বই ভাগ দয়া নিজের কাছে রেখেছেন, আর মাত্র একভাগ দয়া গোটা বিশ্বের সবার মাঝে ঢেলে দিয়েছেন।’

‘আর-রহমান’ শব্দের অর্থ-তিনি সকল সৃষ্টির প্রতি দয়াবান; এমনকী অমুসলিমদের প্রতিও তিনি অব্যাহতভাবে দয়া প্রদর্শন করেন। তবে ‘আর-রহিম’ শব্দটি কেবল ঈমানদারদের জন্য খাস। আল্লাহ তায়ালা ‘আর-রহিম’ হয়ে ঈমানদারদের এই দুনিয়ায় ও আখিরাতে দয়া প্রদর্শন করবেন।

এই পৃথিবীর সর্বত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অবারিত রহমত বিস্তৃত। এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে আল্লাহর রহমত নেই। তিনি ইরশাদ করেন-

وَرَحْمَتِي وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍ –

‘আমার দয়া সর্বত্র বিস্তৃত।’ (সূরা আ’রাফ: ১৫৬)

আমরা যতই পাপ করি না কেন, আল্লাহর দয়া তার চেয়ে অনেকগুণ বেশি। আমাদের পাপ যদি হয় খালের কিংবা বিলের পানির সমান, তাহলে আল্লাহর দয়া সাগরের পানির চেয়েও বেশি। আমাদের পাপ যদি হয় পাহাড়সম, তাহলে আল্লাহর দয়া আকাশের চেয়েও উঁচু। আমাদের কৃত পাপ যত বিশালই হোক না কেন, মহান আল্লাহর অসীম দয়ার তুলনায় তা একেবারই নগণ্য। মানুষের প্রতি মহান আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ অফুরন্ত। তাঁর দয়া বা অনুগ্রহে হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা কারও নেই। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ইরশাদ করছেন-

مَا يَفْتَحِ اللَّهُ لِلنَّاسِ مِنْ رَّحْمَةٍ فَلَا مُمْسِكَ لَهَا ۚ وَمَا يُمْسِكُ فَلَا

مُرْسِلَ لَهُ مِنْ بَعْدِهِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ –

‘মানুষের প্রতি আল্লাহ কোনো করুণা করলে কেউ তা নিবারণ করার (ফেরানোর) নেই। আর তিনি যা নিবারণ করেন, তিনি ছাড়া অন্য কেউ তার প্রেরণকারী নেই। আর তিনি মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (সূরা ফাতির : ০২)

আমরা সবাই পাপী। আমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যিনি পাপ করেননি। প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে, ছোটো কিংবা বড়ো, সগিরা কিংবা কবিরা,

জেনে কিংবা না জেনে, ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় কত অসংখ্য পাপ যে আমাদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। কিন্তু আমাদের জন্য তওবার দরজা সর্বদা খোলা। আল্লাহর কাছে বিনয়ী হয়ে দোষ স্বীকার করে তওবা করলে তিনি কখনো তওবার হাত ফেরান না।

রাসূলুল্লাহ বলেন-

‘প্রত্যেক আদম সন্তানই পাপপ্রবণ। আর পাপীদের মাঝে সর্বোত্তম ব্যক্তি-তওবাকারীগণ।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ৪২৫১)

যত পাপই হোক না কেন, নিরাশ হওয়া চলবে না। আল্লাহ আমাদের পাপগুলো ক্ষমা করে দেবেন, যদি আমরা তওবার মতো তওবা করতে পারি। আল্লাহর দয়া ও রহমত ছাড়া আমরা কেউই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারব না। আমরা সদা-সর্বদাই তাঁর রহমতের ভিখারি।

পরের আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন-

مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ ‘বিচার দিনের মালিক।’

এ দিবসটিকে ইংরেজিতে বলা হয়-The day of judgement-বিচারের দিন বা-The day of accountability-জবাবদিহিতার দিন। কিয়ামতের সে দিনটি এতটাই ভয়াবহ ও ভীতিকর হবে, কেউ কাউকে চিনবে না বা পরিচয় দিতে চাইবে না। এমনকী মা-বাবা, সন্তান-সন্ততি, স্ত্রী-পরিজন কেউই কাউকে চিনবে না। পীর সাহেব মুরিদকে চিনবে না, বাবা সন্তানকে চিনবে না, সন্তান বাবাকে চিনবে না। নেতা কর্মীকে চিনবে না, কর্মী নেতাকে চিনবে না। একে অপরকে দেখে সবাই দিগ্বিদিক দৌড়ে পালাতে থাকবে। দুনিয়ার হিসাবে পঞ্চাশ হাজার বছর দীর্ঘ হবে সে দিনটির সময়সীমা। পুরো জমিনটা এমন সমতল প্রান্তরে রূপান্তরিত হবে-যেটাতে উঁচু-নিচু কোনো ভাঁজ থাকবে না। সূর্য মাথার কাছে চলে আসবে। সূর্যের তাপে মানুষের মাথার মগজ, কান আর নাকের ছিদ্র দিয়ে গড়িয়ে পড়বে। বস্ত্রহীন ও নগ্নপদ হয়ে সবাই সেদিন সমবেত হবে। সবাই ক্লান্ত-শ্রান্ত-ঘর্মাক্ত হয়ে মহা পেরেশান হয়ে উঠবে। সবার মুখে শুধু উচ্চারিত হবে-‘ইয়া নাফসি, ইয়া নাফসি!’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! আমাকে বাঁচাও, আমাকে বাঁচাও!’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *