আজকের শীর্ষ সংবাদ

সূরা ফাতিহার বিশেষণ পর্ব ৭

সূরা ফাতিহার বিশেষণ পর্ব ৭
Spread the love

কুরআনে বর্ণিত হয়েছে-

يَوْمَ يَفِرُّ الْمَرْءُ مِنْ أَخِيهِ – وَأُمِّهِ وَآبِيْهِ – وَصَاحِبَتِهِ وَبَنِيْهِ – لِكُلِّ امْرِى مِنْهُمْ يَوْمَئِذٍ شَأْنْ يُغْنِيهِ

‘তা ঘটবে সেই দিন, যেদিন মানুষ তার ভাই থেকেও পালাবে, এবং নিজ পিতা-মাতা থেকেও এবং নিজ স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি থেকেও। (কেননা) সেদিন তাদের প্রত্যেকের এমন দুশ্চিন্তা দেখা দেবে, যার ফলে অন্যের প্রতি কোনো খেয়ালই থাকবে না।’ (সূরা আবাসা: ৩৪-৩৭)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-

الْآخِلَّاءُ يَوْمَئِذٍ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ إِلَّا الْمُتَّقِينَ

‘সেদিন বন্ধুবর্গ একে অন্যের শত্রু হয়ে যাবে; কেবল মুত্তাকিগণ ছাড়া।’ (সূরা জুখরুফ: ৬৭)

আরও ইরশাদ হয়েছে-

يَوْمَ تَرَوْنَهَا تَذْ هَلْ كُلُّ مُرْضِعَةٍ عَمَّا أَرْضَعَتْ وَتَضَعُ كُلُّ ذَاتِ حَمْلٍ حَمْلَهَا وَتَرَى النَّاسَ سُكَارَى وَمَا هُم بِسُكَارَى وَلَكِنَّ عَذَابَ اللَّهِ شَدِيدٌ

‘যেদিন তোমরা তা দেখতে পাবে, সেদিন প্রত্যেক স্তন্যদাত্রী সেই শিশুকে (পর্যন্ত) ভুলে যাবে-যাকে সে দুধ পান করিয়েছে এবং প্রত্যেক গর্ভবতী তার গর্ভপাত ঘটিয়ে ফেলবে। আর মানুষকে তুমি এমন দেখবে, যেন তারা নেশাগ্রস্ত। অথচ তারা নেশাগ্রস্ত নয়; বরং (সেদিন) আল্লাহর শাস্তি হবে অতি কঠোর।’ (সূরা হজ: ০২)

আল্লাহ হলেন সেই দিনের মালিক। বিচার দিবসের সে মহাক্ষণে শুধুই আল্লাহর রাজত্বই কায়েম হবে, যিনি সর্বদ্রষ্টা এবং মহাপরাক্রমশালী।

পরের আয়াতে বর্ণিত হয়েছে-

إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ

‘আমরা কেবল তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই কাছেই সাহায্য চাই।’

সালাফদের মধ্যে অনেকে মনে করতেন, পুরো কুরআনের ভাবার্থ নিহিত আছে সূরা ফাতিহার মধ্যে। আর পুরো সূরা ফাতিহার ভাবার্থ নিহিত আছে এই আয়াতটির মধ্যে। কারণ, এই আয়াতটির প্রথম অংশে তাওহিদের সমর্থন এবং শিরকের প্রতি নিজের অনাস্থা ঘোষিত হয়- ‘আমি কেবল আপনারই ইবাদত করি।’ দ্বিতীয় অংশে ঘোষিত হয় নিজের ক্ষমতার প্রতি অনাস্থা এবং আল্লাহর একচ্ছত্র ক্ষমতার স্বীকৃতি-‘কেবল আপনার কাছেই সাহায্য চাই।’

এই আয়াতে আল্লাহর সাথে বান্দার একটি নিবিড় সম্পর্কের চিত্রও অঙ্কিত হয়েছে। দয়াময় আল্লাহকে সরাসরি বলা হচ্ছে-‘আল্লাহ! আমি আর কাউকে রব হিসেবে মানি না, কারও নিকট মাথা নত করি না, কারও বশ্যতা স্বীকার করি না, কারও ইবাদত করি না। কেবল আপনাকেই রব হিসেবে মানি, তাই কেবল আপনারই ইবাদত করি, আপনার নিকটই চাই; অন্য কারও কাছে চাই না। আপনি যদি আমাকে ফিরিয়ে দেন, তাহলে আমি আর কাছে কাছে যাব? আমার যে আপনি ছাড়া আর কেউ নেই!’ রাসূল সর্বদা সাহাবিদের বলতেন-

‘যখনই কিছু চাইবে আল্লাহর কাছে চাও, সাহায্যের হাত পাতলে আল্লাহর দরবারেই পাতো।’

রবের সাথে বান্দার এই সম্পর্ক এই কথারই সাক্ষ্য দেয়-আমি আমার সমস্ত ব্যক্তিসত্তাকে, আমার অস্তিত্বকে, আমার সমস্ত স্বাধীনতাকে, সমস্ত ইচ্ছা-পছন্দ ও খায়েশকে মহান আল্লাহর কাছে সঁপে দিয়েছি। তাঁর একত্ববাদের সাক্ষ্য দিচ্ছি। আমি মনে করছি, কেবল তিনিই দিতে পারেন এবং ইবাদত পাওয়ার যোগ্য কেবল তিনিই। আল্লাহ এই স্বীকৃতিটাই আমাদের কাছে চান। এই স্বীকৃতির জন্যই এই সূরার এত মহত্ত্ব।

আল্লাহর সাথে বান্দার এই নিবিড় সম্পর্ক বর্ণনার পর আমরা পরের আয়াত থেকে নিজেদের প্রার্থনা ও দাবি-দাওয়া পেশ শুরু করি। বলি-

اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ

‘আমাদের সঠিক পথে পরিচালিত করো।’

এখানে ‘সিরাতল মুসতাকিম’-এর অনুবাদ আমরা করেছি ‘সরল-সঠিক পথ’, কিন্তু ‘সিরাতল মুসতাকিম’ বা মুসতাকিমের পথ বলতে কী বোঝানো হয়েছে- তা নিয়ে মুফাসসিরে কেরামগণ বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *